ciol-research/BanglaBERT-Dhoroni-AID
Text Classification
•
Updated
text
stringlengths 115
21k
|
---|
আনিকা রহমান (২৭) যেদিনই বাসার বাইরে যান সেদিনই তার চোখ-কান চুলকায়, এতে তিনি খুব কষ্ট পান। সাবান পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করলেও কমে না বলে তিনি শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউড অ্যান্ড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া তোফায়েলের কাছে যান। চিকিৎসক বলেন, “ঢাকার বাতাসে অদৃশ্য ঘাতক অর্থাৎ যে ধুলোবালি ও জীবাণু রয়েছে এ জন্য এটা হয়ে থাকে। মোটকথা বায়ু দূষণই এ জন্য দায়ী।” বায়ু দূষণের এই কুফল আমাদের স্বাস্থ্যের উপর আর কীভাবে প্রভাব ফেলছে জানতে চাইলে ডা. তানিয়া আবারো বলেন, “বায়ূ দূষণের জন্য শ্বাসকষ্ট ছাড়াও পেটের সমস্যা, ফুসফুস জনিত সমস্যা, চামড়ার সমস্যা, হাঁপানি বা এলার্জি জনিত সমস্যা, চোখ ও নাকের সমস্যা, যে কোনো সংক্রমণ, গর্ভকালীন সমস্যা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ দূষণ খুব মারাত্মক প্রভাব ফেলে যা তাদেরকে সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয়।” জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যত শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল তাদের মধ্যে শতকরা ৪৯ ভাগ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিল। ওই সময় রাজধানীর বাতাসে সাধারণত ধুলা ও দূষণ বেড়ে যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে শতকরা ৩৫ ভাগ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগেছিল। ঢাকাবাসীর এই ভোগান্তি যে সত্যি অনেক বেশি মারাত্মক তা বোঝা যায় বায়ু দূষণের আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলো থেকে। সেগুলো বলছে, গত কয়েক বছর থেকে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং ঢাকা পৃথিবীর দূষিততম নগরীগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকছে। তাহলে ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণগুলো কী রকম? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দেশের অভ্যন্তরে ইটভাটা, শিল্প কারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, বস্তিতে প্রায় চল্লিশ লাখ চুলায় আবর্জনা, কাঠ-কয়লা ও কেরোসিন দিয়ে রান্নার ধোঁয়া, ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধূলা ও ধোঁয়া এবং রাস্তা খোড়াখুড়ি ও নির্মাণকাজের ধুলার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে থাকে।” সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছেন। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে যে বায়ুদূষণ ঘটছে, তার অন্যতম কারণ আন্তঃসীমান্ত বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস ভারতে প্রবেশ করে। নভেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করে।” প্রতিবেদনটিতে পরিষ্কারভাবে আরও বলা হয়- “ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচি ও বাংলাদেশের ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে মারাত্মক যানজট ও ধোঁয়া তৈরি হচ্ছে। অবকাঠামো নির্মাণের ফলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ধূলাবালিও বাতাসে মিশছে। ফলে সামগ্রিকভাবে ওই শহরগুলো এই অঞ্চলের বায়ুকে দূষিত করে ফেলছে।” কারণগুলোই বলে দিচ্ছে এ দূষণ কমানো বা রোধ করা সম্ভব। কিছু নিয়ম, কিছু পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগই কমাতে পারে বায়ু দূষণ বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং বায়ু দূষণ গবেষক ড. আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে যে যানবাহনগুলো চলে সেগুলো বেশিরভাগই ব্যবহারের অনুপোযোগী। অনেকগুলো গড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ। গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেগুলো থেকে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয়। উন্নত বিশ্ব ‘কন্ট্রোল ওয়ে’তে দূষণ কমাচ্ছে। তারা পুরানো গাড়ি বাতিল করে দেয়। গাড়িতে তারা উন্নতমানের ইঞ্জিন ব্যবহার করে। আমরা নিন্মমানের ইঞ্জিন ব্যবহার করি। তারা গাড়িতে যে জ্বালানি ব্যবহার করে এর সালফারের মাত্রা ৫০ এর নিচে আমাদের দেশে সেই মাত্রা ২০০০-এর উপরে। তারা ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার করে। তারা ঠিকভাবে গাড়ির মেইনটেন্সেস করে, আমরা তা করি না। ফলে আমাদের গাড়িগুলো থেকে প্রচুর দূষণ হয়।” শুধু তাই নয়, বিকল্প যানবাহন দূষণ কমায়। ট্রাম বিদ্যুতের মাধ্যমে চলে। মেট্রোরেল ও ইলেকট্রিক কার দূষণ কমায় বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন “এখানে কোনো নিয়মনীতি ছাড়া একইভাবে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। এ কাজে ব্যবহৃত কাঁচামাল ওখানেই তৈরি হয় এবং তা ঢেকে রাখা হয় না। উন্নত বিশ্বে নির্মাণ কাজ অনেক যত্ন এবং কম সময় নিয়ে করা হয়। কাঁচামালগুলো অন্য জায়গায় তৈরি করা হয়। এখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় সারা বছর ধরে এবং মাটিগুলো রাস্তার পাশেই রাখা হয়। ওগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে গার্মেন্টস এবং শিল্প কারখানাগুলোর বর্জ্য থেকেও দূষণ ছড়ায় ব্যাপকভাবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।” তিনি আরও জানান, ঢাকার আশেপাশে প্রচুর ইটভাটা রয়েছে এবং সেগুলো দূষণের জন্য কঠিনভাবে দায়ী। অনেক দেশে ইটভাটা নেই। তারা সিমেন্টের তৈরি ব্লক ব্যবহার করে। আমরাও ব্লক ব্যবহার করতে পারি। আমাদের এখানে “ইনডোর এয়ার পলুশন” বেশি হয়। আমরা স্বাস্থ্যসন্মত রান্নাঘর ব্যবহার করি না বলে আমাদের রান্নাঘর থেকেও প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। এসব বিষয়ে যদি আমরা সচেতন হই তাহলে দূষণ কম হবে। কাজগুলো অল্প অল্প করে শুরু করতে হবে। এ জন্য সরকারি পর্যায় থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শুধু স্থানীয়ভাবে ঢাকায় বায়ুদূষণ কমালে কাজ হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ জন্য তারা আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ বন্ধ করার বিষয়ে আঞ্চলিকভাবেও উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে সকলকে আগ্রহী হতে বলছেন। নইলে এই অঞ্চলের কোনো দেশের বায়ু দূষণমুক্ত হবে না বলে জানান তিনি। তাই দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে বলে অধ্যাপক সালাম দৃঢ় মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। যদিও উদ্যোগ নেয়ার এটাই প্রকৃত সময়।” স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার অধ্যাপক সালামের সাথে একমত পোষণ করে সহজে কার্যকর করা সম্ভব এমন কিছু উপায়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে বায়ু দূষণ রোধে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা দরকার। খুব সহজ একটা কাজ আছে যা করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। তা হল ঢাকায় কিছু দূর পর পর ফায়ার ব্রিগেট স্টেশন আছে। সেখান থেকে রাস্তায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করলে বায়ু দূষণ অনেকটাই কমে যাবে। এতে রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলোও বৃদ্ধি পাবে এবং অক্সিজেন সরবরাহ ভালো থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে সমন্বয়হীনভাবে গাড়ি ঘোরাঘুরি কমাতে হবে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কমিশন করা জরুরি। এটা হলে তারা দূষণ রোধে পরিকল্পিতভাবে কাজ করবে। ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট ২০১৯’ হওয়ার কথা। এটা এখনও হয়নি। এটা হওয়া জরুরি। এতে যারা দূষণ বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে এবং বায়ু দূষণের পূর্বাভাসও দেয়া যেতে পারে।” অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, “দূষণ যে কমানো সম্ভব তা করোনাকালীন সময়ের একটি হিসাবের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে পারি। করোনাকালীন সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৫ মার্চের পর সাধারণ ছুটির সময় ঢাকায় বায়ু দূষণ কম ছিল। তখন এয়ার ভিজুয়াল পদ্ধতিতে দেখেছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ সময় সার্বিকভাবে শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ বায়ু দূষণ কমেছিল। এর কারণ হল, ঐ সময় শতকরা ৭০ ভাগ ইটভাটা ও ৮০ ভাগ নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। যানবাহন চলাচল এবং অফিস আদালতে এসির ব্যবহারও কম ছিল। এ সময়টাতে আমরা শতকরা ৭৫ ভাগ ভালো বায়ু সেবন করেছি। ঐ সময় আর্টিকুলেটর মিটারে বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ১০৪ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০১৯ সালে এই মাত্রা ছিল ১২৩ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া বায়ুমান সূচকে অস্বাস্থ্যকর দিন ছিল ১২ দিন যা ২০১৯ সালে ছিল ২১ দিন।” তবে দূষণ কমানোর জন্য তিনি যানবাহন-এসি কিংবা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার কথা বলছেন না। সেগুলো চলবে তবে তা সঠিক নিয়মের মাধ্যমে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে জানান। দূষণের জন্য দায়ী যে বিষয়গুলো সেগুলো এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ঢাকাবাসীরা চরম দুর্দশায় পড়ে যাবেন বলে তাদেরকে শঙ্কিত করে তোলার আগেই সাবধান হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞজনদের অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ আমলে নিতে হবে। করনাকালে দেখা বায়ুদূষণের ইতিবাচক ফলাফল থেকেও আমরা অনেককিছু শিখতে পারি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত লেখার জন্য ঢাকা ট্রিবিউন কোনো ধরনের দায় নেবে না |
রাজধানীতে বায়ু দূষন কমাতে ঢাকাসহ ঢাকার আশে-পাশের পাঁচ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার পাশের চার জেলার মধ্যে রয়েছে- নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ। এসব এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন বলে ইউএনবি'র একটি খবরে বলা হয়। একই সঙ্গে ঢাকায় কি কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে এবং বায়ু দূষণ কমাতে কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরিতে পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনিজল মোরসেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শুনানি শেষে বাশার সাংবাদিকদের বলেন, "বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা শহরের পরিবেশ দূষণ নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে এক নম্বর কারণ হলো ইটভাটা। নরওয়ের একজন বিশেষজ্ঞের দেয়া প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে ঢাকার পরিবেশ দূষণের জন্য ৫২ শতাংশ কারণ হচ্ছে ইটভাটা।" "ফলে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে সে ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আদালত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে বলেছেন", যোগ করেন তিনি। এর আগে, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে প্রকাশিত খবর ও প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২৭ জানুয়ারি পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন "হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ" হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করে। পরের দিন ২৮ জানুয়ারি ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি করে হাইকোর্ট ঢাকা শহরে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সপ্তাহে দুবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। এছাড়া, হাইকোর্ট বায়ু দূষণ রোধে নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারে রুল জারি করেন। এ রিটের শুনানির ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার এই আদেশ এলো। |
বায়ুমান সূচকে ঢাকার বাতাসকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বায়ুমান তিনশ’র বেশি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ঘরের বাইরে অবস্থানের ক্ষেত্রে জনসাধারণকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বয়স্কদের অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক পরামর্শ দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বায়ুদূষণের মাত্রা বিবেচনায় পরিবেশ অধিপ্তরের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তি, শিশু ও বয়স্কদের অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শসহ দূষণের মাত্রা বিবেচনায় অন্যান্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বায়ু দূষণ বায়ুমান সূচকে তিনশ’র কম হলে সতর্কতা প্রত্যাহার করা হবে। |
পরিবেশের স্বাস্থ্যরক্ষার প্রশ্নে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান কী ভাবে সবচেয়ে শেষে হতে পারে? প্রশ্ন তুলল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের দাবি, অবৈজ্ঞানিক ভাবে এবং অনুমানের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বুধবার একটি বিবৃতি জারি করে ‘এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স ইন্ডেক্স’ (ইপিআই)-এর তালিকাকে নস্যাৎ করেছে পরিবেশ মন্ত্রক। ওই বিবৃতিতে মন্ত্রকের দাবি, ‘পরিবেশ রক্ষার মূল্যায়নে যে সমস্ত সূচকের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি, তার কয়েকটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং অনুমানের ভিত্তিতে গড়া হয়েছে।’ এই তালিকার বিশ্লেষণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি, পরিবেশ দূষণ রুখতে ভারতের ব্যর্থতার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বর্জ্য পদার্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায়ও ভারত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে। যদিও তালিকার এই বিশ্লেষণকে ভারত মানতে নারাজ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে পরিবেশ মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ২০২০ সালের ইপিআই তালিকা প্রকাশ করেছে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট ল’ অ্যান্ড পলিসি এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮০টি দেশের পরিবেশের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিয়ে তৈরি এই তালিকায় ১১ বিষয়ের জন্য ৪০টি সূচক ব্যবহার করেছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাতে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, বাস্তুতন্ত্রের মতো বিষয়গুলি। তালিকায় ভারতের স্থান রয়েছে সবচেয়ে নীচে। এমনকি, পরিবেশরক্ষার প্রশ্নে ভারতের থেকেই পাকিস্তান, বাংলাদেশের স্থান উপরে রয়েছে। সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ। |
পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বের সামনে ভারত নজির তৈরি করেছে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দিল্লির বিজ্ঞান মঞ্চে আজ ‘মাটি বাঁচাও’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় ভারতের চেষ্টা বহুমাত্রিক। মাটি রক্ষায় পাঁচটি বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন মোদী। কংগ্রেস অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর যাবতীয় দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের অভিযোগ, মোদী সরকার দেশের পরিবেশ আইনকে দুর্বল করছে। আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে গিয়ে ‘ইকো-চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার দাবি করেছে। পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে মাটি রক্ষায় বিশেষ জোর দিয়েছেন মোদী। তিনি জানিয়েছেন, গত আট বছরে দেশের ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলে ঢেকে দেওয়া গিয়েছে। বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও রেকর্ড সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাটি বাঁচাতে তাঁর সরকার মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপরে জোর দিচ্ছে। সেগুলি হল— মাটিকে কী ভাবে রাসায়নিক মুক্ত করা যায়। দুই, মাটিতে বসবাসকারী প্রাণীদের বাঁচানো। তিন, মাটিতে জলের পরিমাণ বাড়ানো। চার, কম ভূগর্ভস্থ জলের কারণে মাটির যে ক্ষতি হচ্ছে তা লাঘব করা এবং পাঁচ, বনভূমি কমে গিয়ে মাটির ক্ষয় বন্ধ করা। প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘আজ থেকে সাত-আট বছর আগে ইথানল নিয়ে দেশে তেমন চর্চাই হত না। কিন্তু ইথানল একবিংশ শতাব্দীর ভারতের অন্যতম অগ্রগণ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়সীমার পাঁচ মাস আগেই ভারত পেট্রলে ১০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, দেশের ১৩টি বড় নদীর রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়েছে। কমেছে নদী দূষণের মাত্রাও। এর ফলে ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্প আরও জোরদার করা হচ্ছে। দেশের পরিবেশ রক্ষায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তাঁর তির্যক টুইট, ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ১৯৭৩ সাল থেকে পালিত হচ্ছে। বিশ্বগুরু লাইফ(লাইফস্টাইল ফর এনভায়র্নমেন্ট) চালু করছেন। এর চেয়ে বড় ভণ্ডামি আর কিছু হতে পারে না। দেশের সমস্ত পরিবেশ এবং বন আইন, বিধি এবং প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করছেন! আর ইকো-চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবি করেছেন’। সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ। |
পরিবেশদূষণের কথা মাথায় এলেই প্রথমে মনে পড়ে বড় বড় কলকারখানার কথা। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ির আবর্জনা থেকেও বহুল পরিমাণে দূষিত হয় পরিবেশ। তাই পরিবেশদূষণ কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে বাড়ি থেকেই। রইল এমন কিছু টোটকা, যাতে দৈনন্দিন আবর্জনা ফেলতে গিয়ে পরিবেশদূষণ বেড়ে না যায়। প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত ১। পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস অনেক বাজারজাত জিনিসপত্রের গায়েই পুনর্ব্যবহারযোগ্যতার লোগো থাকে। এই লোগো দেখে সাধারণ বর্জ্যের থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসগুলিকে আলাদা করুন। সাধারণ বর্জ্য পদার্থের বদলে এই জিনিসগুলি আলাদা পাত্রে রাখুন। ফেলার সময়ে উপযুক্ত স্থানে ফেলুন। ২। পুনরায় ব্যবহার কিছু কিছু জিনিস খুব সহজ উপায়েই দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যায়। যেমন ধরুন বাতিল বিছানার চাদর দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন কাপড়ের বাজার করার থলে বা টি-টেবিলের ঢাকা। পুরনো কাচের জলের বোতল ব্যবহার করতে পারেন ফুলদানি হিসাবে। এতে বর্জ্য আর খরচ দুই-ই কমবে। ৩। কম্পোস্ট যাঁরা বাড়িতে বাগান করতে ভালবাসেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই কম্পোস্টিং শেখা উচিত। এটি বাগান এবং পরিবেশ, উভয়ের জন্যই ভাল। সবুজ বর্জ্য ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে, সেগুলি জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, চায়ের পাতা ফেলে না দিয়ে গোলাপ চারার গোড়ায় দিলে ফলন ভাল হয়। ৪। আলাদা বর্জ্য আলাদা পাত্রে জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করুন। দু’টি আলাদা রঙের পাত্রে রাখুন দুই ধরনের বর্জ্য। শাক-সব্জির খোসা, রান্নাঘরের বর্জ্য কিংবা ফেলে দেয়া কাপড়জামার মতো জিনিস সহজে মাটিতে মিশে যায়। এই ধরনের আবর্জনা আলাদা ফেলুন। আর প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, খাবারের প্যাকেট এ সব ফেলুন নির্দিষ্ট পাত্রে। ৫। ভেবেচিন্তে ক্রয় করুন অনেক সময়েই অনেকে ঝোঁকের মাথায় হরেক রকম জিনিস কিনে ফেলেন যা আর পরে কাজে লাগে না। আর শেষমেশ তার জায়গা হয় ময়লার ফেলার পাত্রে। এতে খরচ বাড়ে, বাড়ে পরিবেশদূষণও। তাই কিছু কেনার আগেই সচেতন সিদ্ধান্ত নিন। সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ। |
দূষণের মাত্রা অনুযায়ী কলকাতাকে কয়েকটি জ়োনে ভাগ করা হবে। জ়োন-ভিত্তিক দূষণের মাত্রা অনুযায়ী তা রোধের পরিকল্পনা তৈরি হবে। সে জন্য বিশেষজ্ঞদের থেকে পরামর্শও নেওয়া হবে। গত মাসেই পরিবেশবিদদের সঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগের দিন, শনিবার এমনটাই জানিয়েছেন পরিবেশ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার। স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘শহরের সব জায়গায় বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের মাত্রা সমান নয়। তাই আমরা জ়োন-ভিত্তিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছি। এক মাস পর থেকে সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হবে।’’ পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পুর প্রতিনিধিদল বছরভর স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কাছে যাবে। তার মৌলিক উদ্দেশ্য হল, পরিবেশ সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মকে সচেতন করা। যদিও এর আগেও শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছিল পুরসভা। যাদের রিপোর্ট জমা পড়া নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানাও চলে। ফলে, এ বারের উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। এমনিতে শহরের বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলাভূমি ভরাট, পূর্ব কলকাতা জমাভূমিতে বেআইনি নির্মাণ-সহ একাধিক বিষয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। যেখানে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভারও নাম জড়িয়েছে। মামলাগুলির প্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালতের নানা নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশ মানার ক্ষেত্রে পুরসভা-সহ রাজ্য সরকারের যথেষ্ট গাফিলতিও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। এক পরিবেশবিদের বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে শুধু পরিবেশ নিয়েই যে কতগুলো কমিটি হয়েছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। তবু পরিবেশ রক্ষা হয় কোথায়!’’ পরিবেশ আদালতে একাধিক বিষয়ে মামলাকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপন তো রাজ্য সরকারের কাছে বাৎসরিক উৎসব। এ দিকে, অন্য দিনগুলিতে ব্রাত্য থাকে পরিবেশ।’’ শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করা পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্তের মতে, ‘‘রাজ্যে পরিবেশ রক্ষায় কারও নজর আছে নাকি! রাজ্য সরকার তো উৎসব পালন করেই খালাস!’’ সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ। |
প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে পর্যটন শহর কক্সবাজার মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের ১২৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের দূষণ কমিয়ে কক্সবাজারকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। তা না করা গেলে, প্লাস্টিক বর্জ্যের বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, সাগর ও নদ-নদীকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখা এবং প্লাস্টিকের বদলে পাটজাত প্যাকেট উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন পরিবেশবিদরা। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরে একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ অংশীজনদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়। সামুদ্রিক জীবন এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর এ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। কর্মশালার প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, “প্লাষ্টিকের দূষণ সাগরে গিয়ে যাতে সুনীল পানি নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের উচিত নিজেকে বদলানো। নিজে পরিবর্তন হলে সমাজ ও দেশ পরিবর্তন হবে।” ফারহিনা আহমেদ আরও বলেন, “বাংলাদেশের মৌলিক আইন সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে (পঞ্চদশ সংশোধনী)। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের মেন্ডেট হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বণ্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করা। আর এ কাজটি করার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর হলো পরিবেশ অধিদপ্তর।” কর্মশালায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ বলেন, “সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনকারী সব কারখানা এবং এক বছরের মধ্যে উপকূলীয় সিঙ্গেল প্লাস্টিক (এসইউপি) পরিবহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ বন্ধসহ একই সময়ের মধ্যে সকল হোটেল, মোটেল এবং রেস্টুরেন্টেও এর ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।” পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী আবু তাহের বলেন, “কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব বর্জ্যের বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, প্লাস্টিক বর্জ্য সম্পর্কে সবার সচেতনতা জরুরি।” কর্মশালায় বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত বলেন,“কক্সবাজারের লাবনী বিচে প্রতিদিন শহরের ৭৮% প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে পর্যটন স্পটে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বিভিন্ন পেশার নাগরিক, সরকার বেসরকারি খাতসহ তরুণদের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের বজ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, ইউনিডো বাংলাদেশের পরিচালক ড. জাকিউজ্জামান, কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম তারিকুল আলম ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের ও বিভিন্ন দপ্তর, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিসহ অনেকে। কর্মশালার শুরুতে প্লস্টিক দূষণের ওপর তিনটি প্রবন্ধ ও ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। উল্লেখ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উপকূলীয় অঞ্চলের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে কোস্টাল এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় তিন বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তার টুওয়ার্ডস মাল্টিমেক্টোরাল অ্যাকশন প্লান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ প্রণীত হয়। |
উন্নয়ন জরুরি, কিন্তু প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়! ১৯৮৫ সাল, আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে নর্মদা নদীর বুকে সর্দার সরোবর বাঁধ তৈরির বিরোধিতা করে মেধা পাটকরের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। সেই প্রথম জোরদার ভাবে শোনা গিয়েছিল ওই শব্দগুচ্ছ। আজও প্রায় সমান প্রাসঙ্গিক। আজও প্রশ্ন, পরিবেশ রক্ষা কি সত্যিই জরুরি! কারণ, উন্নয়ন ও দূষণ প্রায় হাতে হাত ধরে চলা দু’টি বিষয়। এই নিয়েই শুক্রবার ‘দ্য বেঙ্গল ক্লাব’ ও ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর যৌথ উদ্যোগে একটি আলোচনা চক্রের আয়োজন হয়েছিল শহরে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজকর্মী মেধা পাটকর, পরিবেশ কর্মী মুদার পাথেরিয়া, গবেষক-লেখক তথা পরিবেশ সংক্রান্ত দীর্ঘ কাজ করে আসা ইতিহাসবিদ মহেশ রঙ্গরাজন, পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত, রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতরের সচিব বিবেক কুমার এবং সাংবাদিক জয়ন্ত বসু। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার। আলোচনার গোড়াতেই জানানো হয়, অনুষ্ঠানের নাম ‘প্রিজ়ারভিং আওয়ার এনভায়রনমেন্ট ইজ় অ্যান এক্সোটিক বাট নট অ্যান এসেনশিয়াল এক্সারসাইজ়’-র মতো তির্যক রাখা হলেও, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই— পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই জরুরি। নাম রাখার সার্থকতা এখানেই যে, পরিবেশকে বাঁচানোর গুরুত্ব জেনেও সাধারণ মানুষ বিশ্বজোড়া দূষণের অনেকটা ভাগীদার। তা ছাড়া, উন্নয়নের পিছনে ছুটছে গোটা পৃথিবী। এ দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। যোগাযোগ বাড়াতে পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে রাস্তা। গভীর জঙ্গল ফুঁড়ে এগিয়ে চলেছে রেললাইন। বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে, কিন্তু তা হয়তো আসছে নদীর গতিপথ রুখে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে। সাংবাদিক জয়ন্ত বসু জানান তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। খবরের খোঁজে বেরিয়ে এক সময় শুনেছিলেন, নদীর বুকে বাঁধ তৈরির পরে মানুষের আকুতি, ‘‘নদী ফেরত দাও।’’ নদী-নির্ভর গ্রামের মানুষগুলোর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, বাঁধ ছাড়াও তাঁদের চলে যাবে, কিন্তু নদী ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। কিন্তু সত্যিই কি বাঁধ তৈরি এতটাই অপ্রয়োজনীয়! ইতিহাসবিদ রঙ্গরাজন বলেন, ‘‘ধ্বংস ছাড়া কী করে আমরা কোনও কিছু তৈরি করব!’’ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে, পাহাড় কেটে রাস্তা তো তৈরি করতে হবেই। এ প্রসঙ্গে মেধা পাটকর শুনিয়েছেন তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের উপাখ্যান। পিএইচ ডি ছেড়ে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে নেমেছিলেন মেধা। নর্মদার উপরে সর্দার সরোবর বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছিল সরকার। মেধার দাবি, এত বছর পরে আদালতের রায়ে সকলকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে বলা হলেও, হাজার খানেক মানুষ ঠিকানাহীন। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি তো হিসেবেই ধরা হয়নি! প্রবীণ সমাজকর্মীর কথায়, ‘‘এখন কী অবস্থা যদি জানতে চান— নদী শুকোচ্ছে, নদী মরছে। ...বাঁধ বন গ্যায়া, পর নদী খো গ্যায়া।’’ পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তের অবশ্য আক্ষেপ, ‘‘আমরা শুধু কথাই বলে যাই, কাজের কাজ কিছু করি না! সকলেই এনভায়রনমেন্টাল হিপোক্রিট!’’ প্রায় এই প্রসঙ্গ ধরেই মুদার পাথেরিয়াও জানান, পরিবেশ রক্ষার কথা বলেন সকলে, কিন্তু আর্থিক সামর্থ থাকলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঠান্ডা ঘরেই ঘুমোন, দূষণ জেনেও বিমানে যাতায়াত করেন। মেধার দাওয়াই, উন্নয়ন বজায় রেখে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে আরও জোর দিতে হবে সকলকে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তামিলনাড়ু এ বিষয়ে অনেকটা এগিয়ে। তারা প্রায় ৫০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে।’’ নর্মদা আন্দোলনের কথা টেনে তাঁর পরামর্শ, কোনও প্রকল্প শুরুর আগে, এলাকার বাসিন্দাদের কথা শোনা উচিত। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘ডেউচা পাঁচামির কয়লা খনির বিষয়টি যে উনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সিদ্ধান্তের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁর জন্য ধন্যবাদ।’’ মেধার আরও বক্তব্য, সহজ, সরল জীবনযাপনেই পরিবেশ রক্ষার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। পাথেরিয়াও বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বের হাতে সমস্যার দায়ভার না ছেড়ে, কার্বন নিঃসরণ কমানো তথা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে প্রত্যেককে। প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে ঠান্ডা ঘরে থাকার অভ্যাস, সবেতেই রাশ টানতে হবে।’’ রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতরের সচিব বিবেক কুমারের আশা, সকলে একসঙ্গে চেষ্টা করলে অবশ্যই সমাধান মিলবে। সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ। |
বাগজোলা, কেষ্টপুর-সহ খালের দূষণ রোধে রাজ্যের মুখ্যসচিব একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করবেন। টাস্ক ফোর্সের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলার পাশাপাশি তার ব্যর্থতার দায়ও উল্লেখ করতে হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে পদক্ষেপও করতে হবে। চলতি সপ্তাহে খাল সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য সরকারকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। যা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ, প্রকল্পের ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিক বা আধিকারিকবর্গকে ‘দায়ী’ করার দাবি বিভিন্ন মহল থেকে বহু দিন ধরে উঠছিল। বক্তব্য ছিল, প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কোনও প্রকল্পের রূপায়ণ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী না করা পর্যন্ত সরকারের ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাব যাবে না। খাল সংক্রান্ত মামলায় আদালতবান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘দূষণ করলেই জরিমানা— রাজ্যের এই নীতি নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিককেও দায়ী করা হোক। না-হলে খালের দূষণের জন্য জনস্বাস্থ্যে খারাপ প্রভাবরোখা যাবে না।’’ টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি আদালত মুখ্যসচিবের উদ্দেশে আরও কিছু নির্দেশ দিয়েছে। সেগুলি হল, খাল সংলগ্ন উপযুক্ত স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো, নির্দিষ্ট সময় অন্তর উচ্চ স্তরের বৈঠক, অ্যাকশন প্ল্যান রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা। আদালতের নির্দেশ মেনে কতটা এবং কী কাজ হল, সেই সংক্রান্ত একটি অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কারণ, দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে কাম্য। এ বিষয়ে প্রশাসনকে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত। আদালতের বক্তব্য, নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে জনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে প্রশাসনিক গাফিলতিই স্পষ্ট হবে। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ ২০১৬ সালে বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালের দূষণ সরেজমিনে দেখেছিল। এর পরেই আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে। ওই মামলায় রাজ্যকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা রূপায়ণে ঘাটতি থাকায় চলতি সপ্তাহের নির্দেশে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করে আদালত। আদালত জানিয়েছে, জলাশয়, খাল, নদীর দূষণ রোধে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালনে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আদালতের ভাষায়— ‘বাস্তবটা হল, রাজ্যের ব্যর্থতা জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যে কারণে একমুখী হয়ে জরুরি পদক্ষেপ করার সময় এসেছে এবং বিভাগীয় সমন্বয়ের অভাব এড়াতে সর্বোচ্চ স্তরে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।’ ফলে খালের দূষণ রোধ করে রাজ্য সরকার প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা পালনে সফল হয় কি না, আপাতত সে দিকে তাকিয়ে অনেকে। |
কিচ্ছু পাল্টায়নি, সটান উত্তর এল। এই তো সে দিন এক মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন যে, আমাদের বেছে নিতে হবে উন্নয়ন চাই, না পরিবেশ। হ্যাঁ, ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে, যখন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, অবিলম্বে পরিবেশকে প্রাধান্য না দিলে জলবায়ু পরিবর্তনকে যাবতীয় পরিকল্পনার মধ্যমণি করতে না পারলে উন্নয়ন তো দূরস্থান, হয়তো পৃথিবীটাকেই বাসযোগ্য রাখা যাবে না, তখনও অধিকাংশ রাজনীতিবিদ উন্নয়ন বনাম পরিবেশের যুদ্ধই দেখছেন! মেধা পাটকরের সঙ্গে কথা বলতে বসে প্রথম প্রশ্নই ছিল— এই বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সঙ্কটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদদের উন্নয়ন সম্পর্কে, পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা কি পাল্টাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে? মেধাজি স্পষ্ট করলেন যে, কেউ কেউ মুখ ফস্কে বলে ফেললেও, মনেপ্রাণে দলমত নির্বিশেষে অধিকাংশ নেতা-নেত্রীই মনে করেন, খাল-বিল ভরাট করে, নদী দখল করে, বাতাসে বিষ ঢেলে, ‘রাস্তা জুড়ে’ দাঁড়িয়ে থাকে যে ব্রিজ থেকে বহুতল— সেটাই আসল উন্নয়ন। উদাহরণ অজস্র। ডেউচা-পাঁচামি থেকে কেরলের কে-রেল প্রকল্প। ডেউচা-পাঁচামির পরিকল্পিত কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে পরিবেশের প্রশ্ন স্বাভাবিক ও সঠিক, কয়লা পোড়ানো নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবনাচিন্তা ও বীরভূমের স্থানীয় পরিস্থিতি বিচার করে। কিন্তু মেধা মৃদু হেসে জানালেন, বামপন্থীরা এ রাজ্যে পরিবেশের কারণে ডেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি প্রকল্পের প্রবল বিরোধিতা করলেও, কেন্দ্রের বুলেট ট্রেনের বিরোধিতা করলেও, তাঁরাই আবার যাবতীয় পরিবেশ প্রশ্নকে শিকেয় তুলে কেরলে কে-রেল প্রকল্প আনতে বদ্ধপরিকর, যা তাঁর মতে বুলেট ট্রেনেরই আর এক রূপ। তথৈবচ অবস্থা বিজেপির। রাজনৈতিক প্রয়োজনে আজ তারাও ডেউচা-পাঁচামির বিরোধিতা করছে এ কথাকে সন্তর্পণে পাশে সরিয়ে রেখে যে, প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারই। এবং পরিবেশ ছাড়পত্র তারাই দেবে! অন্য দিকে, তৃণমূল যে সিঙ্গুর ও নয়াচর আন্দোলনের হাত ধরে ৩৪ বছরের বাম শাসনকে সরিয়ে মসনদে এসেছে, সেই আন্দোলনগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল পরিবেশ! আসলে প্রকল্প আমার প্রয়োজন মতো, বা বলা ভাল আমার ইচ্ছামতো হলে পরিবেশ আইন পকেটে তালাচাবির মধ্যে থাকবে, আর উল্টোটা হলে আইন পকেট থেকে বেরিয়ে প্রকল্পে তালাচাবি দেবে, এটাই দস্তুর। বাম আমলে সুন্দরবনে একটি মেগা পর্যটন প্রকল্প প্রায় উদ্বোধন হওয়ার মুখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কেননা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির সঙ্গে শেষ মুহূর্তে মতের অমিল হয় রাজ্য সরকারের। বন্ধ করার ঢাল হিসেবে বলা হয়, প্রকল্পটির ‘এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট’ রিপোর্ট নাকি সঠিক নয়! উল্টো দিকে, দক্ষিণ কলকাতার এক আকাশচুম্বী আবাসন সরকারি তথ্য অনুযায়ী যাবতীয় পরিবেশ আইন ভেঙে তৈরি হলেও তার একটি ইটও স্পর্শ করা যায়নি; না বাম আমলে, না বর্তমান সরকারের সময়। কেননা, এ ক্ষেত্রে যাবতীয় হিসাবনিকাশ ঠিকমতো মিলিয়েই উন্নয়ন আক্ষরিক অর্থে মাথা তুলেছিল পাশের জলাশয়কে সরকারি হিসাবেই ‘এক একর’-এর উপর ভরাট করে। রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও এ সব প্রবণতার কোনও পরিবর্তন হয়নি। উন্নয়নের খড়্গে পরিবেশকে কচুকাটা করার প্রবণতা সব সময় থাকলেও এটা ঘটনা যে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময় তাতে ‘অফিশিয়াল’ তকমা পড়েছে, এবং এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। ‘ইজ় অব ডুইং বিজ়নেস’-এর নামে শিল্পসংস্থাদের যা খুশি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টিকে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলা হচ্ছে, যাবতীয় পরিবেশ সংক্রান্ত আইন দুর্বল করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিধিরাম বানিয়ে রাখা হচ্ছে— অভিযোগের তালিকা লম্বা। মেধা পাটকরের কথায়, এক দিকে আমরা যাবতীয় পরিবেশ নামাবলি গায়ে জড়ানো দিবসগুলি সাড়ম্বরে পালন করছি, অন্য দিকে প্রায় প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক কোনও না কোনও পরিবেশ বিপর্যয়ে অবিরত ধাক্কা খাচ্ছে। আসলে পরিবেশকে পিছনে ঠেলে যে উন্নয়ন হয়, শেষে যে সে-উন্নয়নও বাঁচে না, এটা আজ আর তত্ত্বকথা নয়; হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া সত্য। নর্মদা বাঁধ থেকে এ বিষয়ে ভাল আর কোনও উদাহরণ পাওয়া কঠিন। মেধাজির কথায়, প্রকল্প গড়ার আগে নর্মদা নিয়ে আন্দোলনের সময় বার বার সাবধান করা হয়েছিল, যে ভাবে পরিবেশকে অবজ্ঞা করে প্রকল্পটি গড়া হচ্ছে, তাতে পরিবেশ বাঁচানো তো দূর, সরকার প্রকল্পটি ঘিরে যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সেগুলোও পূরণ হওয়া কঠিন। সে কথা কেউ শোনেনি। “আজ দেখুন, প্রাথমিক খরচের যে হিসাব করা হয়েছিল, তার প্রায় পনেরো গুণ খরচ বাড়ার পরেও কী অবস্থা। সমুদ্র বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে এবং লবণাক্ততা বাড়ছে; নর্মদার জল এত দূষিত যে, আধিকারিকরাই বলছেন এই জল ব্যবহার করলে জৈব চাষের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে না। অবাধে বেআইনি বালি উত্তোলন চলছে; কচ্ছ-এ প্রতিশ্রুতি মতো জল পৌঁছনো যায়নি। পূর্ণ হয়নি বিদ্যুৎ তৈরির পরিকল্পনা। বাদ-বিসংবাদ, মামলা-মকদ্দমা চলছে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি প্রকল্পের জন্য হওয়া ক্ষতি সামলাতে বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছে মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ।” মেধাজির স্পষ্ট বক্তব্য— সরকারকে, তা সে কেন্দ্রেই হোক বা রাজ্যে, আগামী দিনে যাবতীয় নতুন প্রকল্পের ছাড়পত্রে সিলমোহর লাগানোর আগে নর্মদার সর্দার সরোবর বাঁধের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আর তা না নিলে মানুষের মধ্যে আন্দোলন গড়াটাই মূল রাস্তা, যেমনটা কৃষক আন্দোলন করে দেখিয়েছে। কাকতালীয় নয় যে, পৃথিবী জুড়ে পরিবেশকেন্দ্রিক যে সাড়ে তিন হাজারের উপর আন্দোলনের তালিকা এ মুহূর্তে মজুত, সেখানে চিনের পরেই রয়েছে ভারতের স্থান। |
ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়া শিল্প নগরীর ট্যানারিগুলোতে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন ট্যানারি মালিকেরা। এ বছর এক কোটি পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ঈদের দিন থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকরা প্রায় চার লাখ ১০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন। ট্যানারি মালিকদের দাবি, ট্যানারিগুলোর লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রক্রিয়াজাত চামড়া বিক্রির ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। তাই তারা চামড়ার মূল্য অনেক কম পাচ্ছেন। এদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে চামড়ার বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ডের বাইরেও ফেলা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় তরল বর্জ্যে এ বছরও পরিবেশ ও চামড়াশিল্প নগরসংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীতে দূষণের আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার (৩ জুলাই) চামড়াশিল্প নগর ঘুরে দেখা যায়, সাভার ও এর আশপাশের এলাকাগুলো থেকে লবণ ছাড়া চামড়া সংগ্রহ করেছে ট্যানারিগুলো। এগুলোতে লবণ মাখাচ্ছেন শ্রমিকরা। উচ্ছিষ্ট বর্জ্য হিসেবে চামড়া থেকে কেটে ফেলা হচ্ছে লেজ, কান, মাথার অংশ। এগুলো পরে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে শিল্পনগর ঘেঁষে থাকা ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। এ বছর ঈদকে কেন্দ্র করে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নদীর পাড় ঘেঁষা ডাম্পিং ইয়ার্ডের একটি অংশে বড় গর্ত করা হয়েছিল। তবে সেখানে বর্জ্য না ফেলে তা নেওয়া হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। সেখানেই লেজের অংশ থেকে লোমযুক্ত অংশটি আলাদা করছেন ৪/৫ জন। নদীর পাড়ে উন্মুক্ত স্থানে লেজের লোমযুক্ত অংশটি সংগ্রহ করা শ্রমিক মঞ্জু মিয়া বলেন, “এই অংশটি আগে ৩-৪ টাকা করে বিক্রি হতো। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সায়। আপাতত সংগ্রহ করে রাখছি। পরে বিক্রি করবো।” পাশেই ছিলেন রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সিইটিপির কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বর্জ্য ফেলার জায়গায় যাওয়ার সড়ক বৃষ্টিতে কাঁদা হয়ে গেছে। ফলে গাড়ি যেতে পারছে না। তাই এখন এখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। পরে সরিয়ে যথাস্থানে নেওয়া হবে।” চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানান, সোমবার থেকেই লবণ দিয়ে সাজিয়ে রাখা চামড়া খোলা হবে। তারপর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ড্রামে দেওয়া হবে। চামড়ার ব্যবসায়ী ও প্রক্রিয়াজাতকরণকারী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “আমরা এখন কাঁচা চামড়া কাটিং করে লবণ দিয়ে সাজিয়ে রাখছি। এরপর চামড়ার স্তূপ ভেঙে ওয়েট ব্লু'র জন্য ড্রামে দেওয়া হবে। এক সপ্তাহ পর থেকে অন্যান্য জেলার লবণযুক্ত চামড়া আসা শুরু করবে।” ট্যানারিগুলোর এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার অনুসারে দাম পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকেরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সিইটিপি বা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থাপনা না থাকায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সনদ না থাকায় আমাদের কাছ থেকে চামড়া নিচ্ছেন না। যে দু-একটি দেশের ক্রেতা রয়েছে তারাও আগামী দিনে চামড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র চীনের ক্রেতাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “আগে ইউরোপের বাজারে প্রতি বর্গফুট চামড়া এক থেকে এক ডলার ৬০ সেন্টে বিক্রি করা যেত। চীনের ক্রেতাদের কাছে এখন ৪৫ থেকে ৮০ সেন্টে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদের দিন থেকে আজ (রবিবার) বিকেল পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ১০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন ট্যানারি মালিকরা।” এদিকে চামড়ার বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলায় এসব থেকে গড়িয়ে পরা তরল বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে মিশে নদীতে যাচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং নদী দূষণের সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “সিইটিপি পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতি বছরই ট্যানারির অপরিশোধিত তরল বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হয়। কোনো পদক্ষেপ না নিলে এবারও একই অবস্থা হবে। এরইমধ্যে কঠিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। যে কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এরমধ্যে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের দূরদর্শিতার অভাব ফুটে উঠেছে।” পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “চামড়া শিল্প নগরীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত চামড়াশিল্প নগরী পরিদর্শন করছে। পরিবেশ দূষণ করতে পারে এমন যেকোনো বিষয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
দূষণ-মানচিত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানে ভারত। প্রতি বছর বায়ু, জল, জৈব ও শিল্প বর্জ্য, যানবাহন ইত্যাদি থেকে দূষণজনিত কারণে ভারতে অন্তত ২৪ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে! দূষণ তালিকায় দ্বিতীয় থাকা চিনে বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লক্ষ! সম্প্রতি দূষণ সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় এ কথা জানানো হয়েছে। ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নাল’-এ প্রকাশিত দূষণ সংক্রান্ত সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রতি বছর দূষণ জনিত কারণে বিশ্বে অন্তত ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ওই তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। সেখানে দূষণে বছরে ১ লক্ষ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী দু’দশকে দূষণে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই সমীক্ষায়। সমীক্ষক দলের অন্যতম সদস্য,আমেরিকার বস্টন কলেজের ‘গ্লোবাল পাবলিক হেল্থ প্রোগ্রাম’ এবং ‘গ্লোবাল পলিউশন অবজারভেটরি’-র ডিরেক্টর ফিলিপ ল্যান্ডরিগান জানিয়েছেন, দূষণে মৃতদের মধ্যে বড় অংশ ‘প্যাসিভ স্মোকিং’য়ের শিকার। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দূষণ-তালিকায় ১৭৭ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছিল ভারত। এর পর ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’-এর রিপোর্ট জানিয়েছিল, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর ভারতে প্রাণহানি ঘটছে ১২ লক্ষ মানুষের। |
কোনও পর্বতারোহী নন, এভারেস্টের চূড়া ছেড়ে আরও উপরের দিকে উড়ে গেল একটি আকাশযান। চিনের ‘আর্থ সামিট মিশন ২০২২’-এর অন্তর্গত একটি আকাশযান পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমীক্ষা করতে আকাশে পাড়ি দেয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের উচ্চতাকেও টপকে গিয়ে নজির ভাঙল চিন। আবহবিদরা সাধারণত ‘ওয়েদার বেলুন’-এর মাধ্যমে পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ করেন। ভূভাগ থেকে জলীয় বাষ্পের পরিবহণ প্রক্রিয়াও এই পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এই বেলুনগুলো আকাশের অনেক উঁচুতে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে সহায়তা করে। কিন্তু এই বছর অন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করল চিন। প্রায় ২,৩৮১ কিলোগ্রাম ওজনের একটি আকাশযান ৪,৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত একটি বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে। চিন এই আকাশযানের নাম দিয়েছে ‘জিমু নং ১’। প্রতি সেকেন্ড সময়ে ৩০ মিটার গতিবেগে এই যানটি ৯,০৩২ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওড়ে। ফলে তা এভারেস্টের উচ্চতাকেও (৮,৮৪৯ মিটার) ছাপিয়ে যায়। বাতাসে কত পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ব্ল্যাক কার্বন, ধুলোবালির উপস্থিতি রয়েছে তা পরিমাপ করাই এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য। চিনের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তিব্বত প্লেটের পরিবেশ বদলের কারণের পিছনে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব পড়ছে। চিন এভারেস্টে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে একটি অভিযান চালায়। বেস ক্যাম্প থেকে এক ধরনের বেলুন ছাড়া হয় যা ৫,২০০ মিটার উচ্চতা অবধি পৌছয়। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস্ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মুখ্য অধ্যাপক জু টং জানিয়েছেন, ‘‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে যত বেশি ওজোন গ্যাস থাকবে, তত ভাল। আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি আটকে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু এই গ্যাস যত নীচের দিকে নামতে থাকে, ততই ক্ষতিকর। এর ফলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি হয়।’’ |
ধাপায় গল্ফ কোর্স, টেনিস কোর্ট না অন্য কিছু হবে, সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের উপরে নির্ভর করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। ওই কমিটিই জানাবে, কোন সংস্থার মাধ্যমে ধাপা প্রকল্পের সার্থক রূপায়ণ করা যায়। কমিটিতে থাকবেন পরিবেশবিদ, পরিবেশকর্মী-সহ পুর প্রতিনিধিরা। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘কমিটি দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত যে সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে বলবে, তাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, পুরসভার তরফে ধাপার প্রকল্প রূপায়ণের জন্য পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজে গত বছরের মে মাসে দরপত্র ডাকা হয়েছিল। তাতে ধাপার যে অংশ (প্রায় ১২.১৪ হেক্টর) রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে বায়ো রেমিডিয়েশন পদ্ধতির (যে প্রক্রিয়ায় সজীব বস্তু ব্যবহার করে মাটি, জল বা কোনও এলাকার দূষণ কমানো হয়) মাধ্যমে দূষণমুক্ত করা হয়েছে, সেখানে পরিবেশবান্ধব রাজস্ব সংগ্রহ প্রকল্প (ইকো-ফ্রেন্ডলি রেভিনিউ জেনারেটিং প্রোজেক্ট) রূপায়ণের জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজ করা হয়েছে। তাতে সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু প্রকল্প রূপায়ণে ফাঁক যাতে না থাকে, তাই সম্প্রতি ফের দরপত্র আহ্বান করেছে পুরসভা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থসাহায্য করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাদের শর্ত, ওই জমির দূষণমুক্ত অংশ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অন্য সংস্থাকে দিতে পারবেন না পুর কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা নিজে যদি এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে রাজস্ব সংগ্রহের প্রকল্প করতে চান, তা করতে পারেন। সেই সূত্রেই হর্টিকালচার সেন্টার, বটানিক্যাল সেন্টার, গল্ফ কোর্স, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, টেনিস কোর্ট, বিয়েবাড়ি ভাড়া দেওয়া-সহ একাধিক ব্যবস্থা নিয়ে পুর আধিকারিকদের মধ্যে আলোচনা হয়। এক পুরকর্তার বক্তব্য, ‘‘যে মডেলটি পুরসভার পক্ষে সব চেয়ে লাভজনক হবে, সেটাই বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রহণ করা হবে।’’ পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ধাপার ওই অংশ ২০০৯-’১০ সাল নাগাদ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। জঞ্জালের স্তূপকে বায়ো রেমিডিয়েশন পদ্ধতিতে ‘ক্লোজ়’ করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। মাটি কেটে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উপরে এসটিপি শিট, জিয়ো টেক্সটাইল, উদ্ভিদের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনও ভাবে জঞ্জাল নিঃসৃত তরল বা জঞ্জাল থেকে গ্যাস বেরিয়ে এলাকা দূষিত করতে না পারে। নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থিতাবস্থা বজায় রাখার দায়িত্ব পুরসভার। পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, আগে বিনোদন পার্ক, পাখিরালয় তৈরির কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই এ বার পরামর্শদাতা সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। |
কুষ্টিয়ায় চালকলের বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে খাজানগর-কবুরহাট এলাকার পরিবেশ। মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল। দুর্গন্ধযুক্ত খালের কালচে পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। মারাত্মক দূষণে খাল সংলগ্ন পুকুর-জলাশয়েরও মাছ মারা যাচ্ছে। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি ভারি কারখানার অবস্থান। এদের কারোই বর্জ্য শোধনাগার নেই। দেশের অন্যতম বৃহৎ ধান-চালের মোকাম সদর উপজেলার খাজানগরে। স্থানীয় বটতৈল ইউনিয়ন থেকে শুরু করে খাজানগর, কবুরহাট হয়ে আইলচারা পর্যন্ত বড় আকারের অর্থাৎ ভারি অটোমেটিক চালকল রয়েছে প্রায় ৫৫টি। আর হাসকিং এবং প্রসেসিং মিলিয়ে মিলের সংখ্যা প্রায় ৪৫০টি। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৩৫০টির মতো মিল চালু রয়েছে। এসব চাল কলের কোনোটিরই নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। মিলের দুর্গন্ধযুক্ত দূষিত পানি পাইপের মাধ্যমে সরাসরি ছেড়ে দেওয়া হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের খালে। যা চলে কৃষিজমিতে গিয়ে ব্যাহত করে উৎপাদন। দূষিত পানির সঙ্গে ধানের চিটা, কুঁড়া ও ছাই থাকায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালগুলো। দূরের চালকলগুলোও পাইপ লাইনের মাধ্যমে বর্জ্যের সংযোগ রেখেছে খালের সঙ্গে। চালকলের এসব বর্জ্য কেবল পানিই নয়, সার্বিক দূষণের জন্য দায়ী। যার ভুক্তভোগী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। চালকলের বর্জ্য পানিতে মিশে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়ায়। সূত্র জানায়, উল্লিখিত কলগুলোর মধ্যে মাত্র ৩০টির পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলো ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। খাজানগর এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, “চালকলগুলোর বর্জ্যের কারণে এ এলাকায় কোনো ফসল ভালো হয় না। মাঠের পানিতে নামলেই হাত-পা চুলকায়। এ কারণে শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে চান না।” স্থানীয় চা দোকানি রহমত বলেন, “মিলের চিটা, ময়লা সব এই খালের পানিতে গিয়ে মিশে যায়। যার কারণে এই এলাকায় মশা-মাছির অত্যাচার বেশি।” স্থানীয় বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির বলেন, “মিল মালিকদের এ বিষয়ে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা কেউই কথা শোনেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছরই এসব খাল খনন করে। কিন্তু চালকলের বর্জ্যের কারণে কয়দিনেই খাল ভরে যায়।” জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহামুদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এসব বিষাক্ত বর্জ্যে ক্ষতিকর ভারি ধাতব যেমন আয়রন, সিসাসহ নানা উপাদান থাকতে পারে। যেটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার দূষিত পানিতে ফসলের উৎপাদনও কম হয়।” বাংলাদেশ অটোরাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, “মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ আমরা করতে চাই না। তবে সরকার যদি এখানে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে উদ্যোগ নেয় তাহলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। এতে এখানকার প্রকৃতি ও মানুষ মারাত্মক দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।” কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “খাজানগর এলাকার রাইসমিলগুলোর বর্জ্যের কারণে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ খাল কিছুদিন পরপরই ভরাট হয়ে যায়। যে কারণে বারবার পরিষ্কার করা সত্ত্বেও কোনো কাজে আসে না। মিল মালিকদের বহুবার খালে বর্জ্য না ফেলার জন্য অনুরোধ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।” |
‘গঙ্গা জল স্নানের উপযোগী: কেন্দ্র’ (১৫-৩) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই পত্র। কেন্দ্র এমন দাবি করলেও জলের ‘ফিকল কলিফর্ম’-এর মাত্রা জানায়নি। জলের উৎকর্ষ কেবলমাত্র ‘বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড’-এর (বিওডি) উপরেই নির্ভরশীল নয়, ‘কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড’-এরও (সিওডি) প্রয়োজন রয়েছে। সব ক’টিই জলের গুণমানের নির্দেশক। গঙ্গার জল একই সঙ্গে মানুষের স্নানের জন্য এবং মাছের জলবাসের জন্য উপযোগী হওয়া দরকার। দেরিতে হলেও দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গঙ্গার দূষণ রুখতে বাংলা উদ্যোগ করেছে। সেই অভিনব উদ্যোগ অন্য রাজ্যকে পথ দেখিয়েছে। চেষ্টা করলে প্রশাসন পারবে ১৫০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশুদ্ধ করে গঙ্গায় ফেলতে। গঙ্গার যাত্রাপথে প্রায় ৩০০ কোটি লিটার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশছে। এই তরল বর্জ্য পরিশোধন এবং গঙ্গার পবিত্রতার পুনরুদ্ধারে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ (১৯৮৬) এবং ‘নমামি গঙ্গে’ (২০১৪) প্রকল্পের সূচনা। এ রাজ্যের শ’দুয়েক নালা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে গঙ্গায় পড়েছে। তার মধ্যে তিনটি ৭০ ভাগের বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী বলে পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন। যেমন— নাজিরগঞ্জ খাল, বালি খাল এবং আদি গঙ্গা। বর্তমানে বাংলায় গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় ২১টি বর্জ্য পরিশোধনের কারখানা রয়েছে, যেগুলি প্রতি দিন ২৮.৫ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের ক্ষমতা রাখে। যা মোট তরল বর্জ্যের ২০ শতাংশের কম। অর্থাৎ রোজ ১১৪ কোটি লিটার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। আগামী দিন আরও ১৬টি কারখানা বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। অথচ লকডাউন পূর্বের তথ্য, গঙ্গাজলে সিএফ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। দক্ষিণেশ্বরে তিন লক্ষ হলে গার্ডেনরিচে পাঁচ লক্ষ, যা স্নানের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। আন্দোলন, অনশনে গঙ্গা মুক্তি পায়নি। দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে না পারলে মা গঙ্গারও গঙ্গাপ্রাপ্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা। সুব্রত পাল শালবনি, বাঁকুড়া ষাটে সল্টলেক ১৬ এপ্রিল ষাট পূর্ণ হল কলকাতার উপনগরী সল্টলেকের। মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের আমন্ত্রণে ওলন্দাজ ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা নেডিকো শহরের পূর্ব দিকে থাকা লবণাক্ত জলাশয়গুলির সার্ভে করে দেখেছিল, কী করে অঞ্চলটিকে বাসযোগ্য করা যায়। দেখা গেল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জলাশয়গুলির তলদেশের উচ্চতা আশপাশের জলবহনকারী খালের থেকে কম। অর্থাৎ, শুধুমাত্র লবণাক্ত জল সরিয়ে দিলেই হবে না। এই বিপুল জমিকে ভরাট করে উচ্চতাবৃদ্ধি করতে হবে। ইতিমধ্যে হুগলি নদীর নাব্যতা বজায় রাখতে ব্যাপক ড্রেজিং-এর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। অতএব মাটির ব্যবস্থা হল। ১৯৫৬-র মে মাসে সরকার ১৭৩.৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে দখল নিল। গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হল যুগোস্লাভ ফার্ম ‘ইনভেস্ট ইমপোর্ট’-কে। এই ফার্ম বলল, গঙ্গা থেকে পলি কেটে বহন করে এনে ফেলতে যা খরচ, তার থেকে অনেক অল্প খরচে কাজ হবে যদি পাইপলাইনের মাধ্যমে পাম্প করে সরাসরি জল-মেশানো পলি ফেলা হয় জমিতে। অতিরিক্ত জলটুকু অচিরেই মাটি টেনে নেবে এবং বাসযোগ্য হয়ে উঠবে এই প্রান্তর। ১৯৬২ সালের ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় ও সেচমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেন এই বিশাল কর্মযজ্ঞের। ১৯৭১-৭২ থেকে বাঙালি ভদ্রলোকেরা আসতে শুরু করলেন। প্রথম বাড়ি হিসেবে যেটি স্বীকৃতি পেয়েছে, এবি ব্লকের ‘মূলঘর’। সাদামাটা দোতলা বাড়ি। শোনা যায়, পুব বাংলায় মালিকদের গ্রামের নাম ছিল ‘মূলঘর’। বিডি-১ নম্বর বাড়িটিও প্রাচীন। ১৯৭১-এ জাতীয় কংগ্রেসের সেশন বসেছিল সল্টলেকের প্রান্তরে। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন খড়ের ছাউনি দেওয়া ‘ইন্দিরা ভবন’-এ। পরে এটি জ্যোতি বসুর বাসস্থান হয়। ১৯৫০-এর দশকে সার্বিয়ার স্থপতি ও টাউন প্ল্যানার তোস্কোভিচ (যাঁকে সল্টলেকের নগর পরিকল্পনার জনক ধরা হয়) এক আলো হাওয়া-সমন্বিত, নাতি-উচ্চ বসতপল্লির পরিকল্পনা করেন। কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে পঁচাশি বছরের তোস্কোভিচ জানান, প্রাথমিক সমীক্ষায় তাঁরা দেখেছিলেন বাঙালি তখনও ‘ফ্ল্যাট-কালচার’-এ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তারা আলাদা বাড়িতে থাকতে পছন্দ করছে, অথচ এক সঙ্গেও থাকতে চায়। তাই সল্টলেকের ব্লক-ব্যবস্থা। তিন-চারশো বাড়ির জন্যে একটা করে পার্ক, বাজার। পার্কগুলোতে সরকারি তদারকিতে বাবলা, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, পলাশ-সহ নানা ধরনের গাছ লাগানো হল। আশির দশকের মধ্যেই তারা বেশ বড়সড় হয়ে ছায়া দিতে শুরু করে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই সব গাছের পাতা পড়েই তৈরি হয়েছে সল্টলেকের বর্তমান টপ সয়েল। সত্তরের দশকেও সল্টলেক ছিল ধু ধু প্রান্তর। এ দিক-ও দিক দুয়েকটা বাড়ি মাথা তুলেছে। ইতিমধ্যে গঙ্গার পলি থেকে জল নিষ্কাশিত হয়ে সাদা বালির রূপ নিয়েছে। সেই বালিতে না হয় গাছ, না তা ইমারতি কাজে লাগে। মাথা তুলেছে কাশফুলের ঝাড় আর লম্বা ঘাসের জঙ্গল। দুটো শালখুঁটির মাথায় খড়ের আবরণ দিয়ে তৈরি বাসস্টপ। নিচু বাড়ি, অনেকটা নীল আকাশ আর গাছপালার ছাউনি— এই ছিল আদি সল্টলেক। নব্বই-এর উদার অর্থনীতির পিঠে সওয়ার হয়ে এল সফটওয়্যার-ঢেউ, ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল পরবর্তী প্রজন্মের এক বড় অংশকে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রজন্ম পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে শহরতলির দিকে সরে গেল। ইতিমধ্যে ৯৯৯ বছরের লিজ়ের বাধা কাটিয়ে, জমি হস্তান্তর আইনি বৈধতা পেয়েছে। বাড়ির উচ্চতা-সম্পর্কিত বিধিও শিথিল হয়েছে, দেড়-দোতলা ভেঙে মাথা তুলছে অতিকায় তিন-চারতলা বাড়ি। সল্টলেক আর নাতি-উচ্চ নেই, ষাট বছরে এসে সে চরিত্র বদল করছে, বহরেও বেড়েছে খানিকটা। অনেকে বলেন সল্টলেকের নিজস্ব সংস্কৃতি নেই। নেই প্রতিবেশীসুলভ সৌহার্দ। কথাগুলো সত্যি, কিন্তু যাদের মাধ্যমে এ সব হওয়ার কথা ছিল, সেই দ্বিতীয় প্রজন্মটাই যে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে! জয়জিৎ লাহিড়ী ইমেল মারফত জল অপচয় ‘সাড়ে ৯ কোটি লিটার জল খরচ শুধু রং ধুতে’ (২০-৩), দোলের পর এই খবর শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, লজ্জার ও চিন্তার। সারা পৃথিবীতে ৬৬.৩ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন। পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ শতাংশ হল সমুদ্রের নোনা জল। ফলে তা পানযোগ্য নয়। বাকি তিন শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ বরফ হয়ে হিমবাহ বা অন্য জায়গায় জমে রয়েছে। ফলে সারা পৃথিবীর মানুষের ব্যবহারের জন্য রয়েছে শুধুমাত্র ১ শতাংশ জল। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, যে হারে জল অপচয় হচ্ছে, তাতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র সঙ্কটে পড়বে। কিন্তু জল অপচয় থামেনি। রাস্তাঘাটে টাইম কল খোলা থাকলে বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই বোধ করেন না। আবার কেউ জল যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করেন। আজও ভারতে এমন জায়গা আছে, যেখানে মাইলের পর মাইল হেঁটে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সহ্য করে পানীয় জল নিয়ে আসেন মানুষ। তাই জল অপচয় বন্ধ করা উচিত। আব্দুর রউফ মোল্লা শান্তিপুর, নদিয়া রেল সমস্যা আদ্রা-আসানসোল রেলপথটির উপর নির্ভরশীল বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার হাজার হাজার রেলযাত্রী। দীর্ঘ দিন হয়ে গেল দক্ষিণ-পূর্ব রেল এই পথের লোকালগুলো চালু করছে না। সারা দিনে বারোটি ট্রেনের মধ্যে পাঁচটি চালানো হচ্ছে। এ ছাড়াও এই লাইনে চলাচলকারী খড়্গপুর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে হঠাৎ এক্সপ্রেস ঘোষণা করে সর্বনিম্ন ভাড়া তিরিশ টাকা করা হল। অবিলম্বে ট্রেনটিকে আগের মতো লোকাল হিসেবে চালানো হোক। ন্যূনতম ভাড়া দশ টাকা করা হোক। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তিলুরি, বাঁকুড়া |
চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তীরে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের অপরিশোধিত চিনির গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ফলে পরিবেশের ক্ষতি নিরুপণে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির ব্যাপারে জানানো হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিল্লোল বিশ্বাসকে। বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্টি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিভার-হারবার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের পরিচালক ও ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপ-পরিচালক মো. কামরুল হাসান। আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করার পর পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ এবং এ ঘটনায় বর্ণিত ক্ষতির প্রশমন ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ বা প্রস্তাবনা দেবেন। যা পাঠাতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর। কমিটি প্রয়োজনে অন্য যে কোনো সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে। গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে এস আলম সুগার মিলের চারটি গুদামের মধ্যে একটিতে আগুন লাগে। সেই আগুন বৃহস্পতিবারও পুরোপুরি নেভেনি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের চেষ্টায় মূল কারখানা ও অন্য গুদামগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো গেলেও গুদামের অপরিশোধিত চিনির গলিত বর্জ্য দুদিন ধরে পাশের কর্ণফুলী নদীতে পড়ে দূষণ সৃষ্টি করছে। গত সোমবার বিকেল থেকেই নদীর দুই তীরে ভেসে উঠছে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোড়া চিনির বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেছে। সে কারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। |
এখনই যা গরম পড়েছে তাতে নিজের সঙ্গে একটি খাবার জলের বোতল না রাখলেই নয়। রোজের ব্যবহারের জন্য বাড়িতে কাচের বোতল থাকলেও রাস্তায় সেই ধরনের বোতল ব্যবহার করা বেশ ঝক্কির। ধাক্কা লাগলে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে। তবে, প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা মোটেই ভাল নয়। তাই ধাতব পাত্রেই জল রাখেন। কিন্তু তা কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? প্লাস্টিক ছাড়া জলের পাত্র হিসেবে সবচেয়ে ভাল হল ধাতব বোতল। যা নিয়ে সহজেই বাইরে বেরোনো যায়। প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করার নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু ধাতুর বোতল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বিধিনিষেধ নেই। তা ছাড়া ধাতুর বোতলে দীর্ঘ ক্ষণ জল ঠান্ডা বা গরম জল রাখার সুবিধাও আছে। ধাতুর বোতল সাধারণত পুনর্ব্যবহারযোগ্য। প্লাস্টিকের বোতল পরিবেশবান্ধব নয়। তাই নিত্য ব্যবহারের জন্য এই ধাতুর বোতলই ভাল। স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম না কি তামা, কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল? স্টিলের বোতলে জল রাখলেও তা খুব বেশি ভারী হয় না। হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়ার ভয়ও নেই। এই ধাতু জলের সঙ্গে কোনও বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। জলের মধ্যে ধাতব কোনও গন্ধ বা স্বাদও থাকে না। জলের বদলে গরম চা কিংবা কফিও রাখা যেতে পারে স্টিলের বোতলে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি জলের বোতল স্টিলের চাইতে অনেকটাই হালকা, পরিবেশবান্ধব। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ঠান্ডা বা গরম যে কোনও ধরনের তরলের সঙ্গেই অ্যালুমিনিয়াম বিক্রিয়া করে। শরীরে অতিরিক্ত অ্যালুমিনিয়াম প্রবেশ করলে শারীরিক নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের বোতল বেশি ব্যবহার না করাই ভাল। আগে জল রাখার জন্য সাধারণত মাটি কিংবা তামার পাত্রই ব্যবহার করা হত। অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই ইদানীং তামার বোতলে জল খান। তামার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাল রাখতে এবং হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে তামা জলের সঙ্গে বিক্রিয়া না করলেও অ্যাসিডযুক্ত যে কোনও তরলের সঙ্গে তা প্রতিক্রিয়া করে। তাই সেই ধরনের কোনও পানীয়ের জন্য তামার পাত্র ব্যবহার না করাই ভাল। প্লাস্টিক ছাড়া জলের পাত্র হিসেবে সবচেয়ে ভাল হল ধাতব বোতল। ছবি: সংগৃহীত। জল রাখার ধাতব পাত্র কেনার আগে কী কী জেনে রাখা জরুরি? ধাতুর পাত্র স্বাস্থ্যকর হলেও কেনার সময়ে তার মান অর্থাৎ ‘ফুড গ্রেড’ দেখে তবেই কিনতে হবে। ধাতব বোতলের ভিতরে যেন রং কিংবা অন্য ধাতুর পরত না থাকে। দীর্ঘ দিন জল রাখতে রাখেত সেই পরত কিন্তু জলের সঙ্গে মিশতে শুরু করতে পারে। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। জল ঠান্ডা বা গরম রাখার জন্য একান্তই যদি ‘ইনসুলেটেড’ বোতল কিনতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ভ্যাকিউম-যুক্ত ‘ডবল ওয়াল্ড স্টেনলেস স্টিল’ বোতল কেনাই ভাল। |
মাঠ-জুড়ে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেট, ফেলে দেওয়া খাবার, জলের বোতল থেকে কাগজ এবং বিভিন্ন আবর্জনা। মাঠে বাঁশ, কাঠের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। সেগুলি তুলে ফেলার পরে মাঠে গর্ত হয়েছে। ধুলো উড়ছে পাশের এলাকাতেও। শিলিগুড়ির অদূরে কাওয়াখালি মাঠের রবিবারের ছবি। এই মাঠেই গত শনিবার জনসভা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর। রবিবার দিন পেরিয়ে গেলেও তার সাফাই হয়নি বলে অভিযোগ। অন্য সময় পরিষ্কার এলাকাতেও বিজেপি নেতা, কর্মীদের ঝাঁড়ু হাতে দেখা যায়। কিন্তু দলীয় জনসভার মাঠের পরিষ্কার করতে সেই নেতা, কর্মীরা কোথায় গেলেন প্রশ্ন তুলছেন দলেরই একাংশ। যদিও শিলিগুড়ি সাংগঠনিকে জেলা বিজেপির সভাপতি অরুণ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আমরা আজ সোমবার মাঠ সাফাই করব। বিশাল মাঠের ভিড়ে কর্মীদের প্যাকেটে জল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। শ্রমিকদের দিয়েই তা সাফাই করা হবে। বাকি অংশের কাজ দলের তরফেই হবে।’’ ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়। পাশের এলাকার মানুষের অভিযোগ, হাওয়ায় প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং অন্যান্য আবর্জনা উড়ে গিয়ে এলাকার বাড়িগুলিতে ঢুকছে। সেই মাঠে গরু ঘুরে বেড়ায় অনেক। ফেলে দেওয়ার খাবারের অংশ গরুও খাচ্ছে। তাতে রোগ হতে পারে। পাশের বালাসন নদীতেও আবর্জনা পড়ে নদী দূষণের অভিযোগ উঠছে। দলীয় সূত্রে খবর, মোদীর জনসভার জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মাঠ সাফাইয়ের জন্য টাকা খরচ করতে চাইছেন না কেউ। ঝাঁড়ু হাতে নামতে চাইছেন না দলীয় নেতা, কর্মীরা বলে দাবি। মাঠে সে ভাবে খেলার কোনও প্রশিক্ষণ না হলেও স্থানীয় ছেলেদের মাঝে মাঝে ক্রিকেট, ফুটবল নিয়ে খেলতে দেখা যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বিগত সভাতেও দেখা গিয়েছিল, মাঠ নোংরা হয়ে পড়ে থাকে। নানা সমস্যা হয়। মাঠটি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, যারা জনসভার আয়োজন করে সাধারণত তাদেরই মাঠ পরিষ্কার করার কথা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়। |
উদ্দেশ্য প্লাস্টিক দূষণ কমানো। সে জন্য বিটুমিনাসের সঙ্গে প্লাস্টিক-বর্জ্যকে মিশিয়ে রাস্তায় আলোর ছটা (লাইট রিফ্লেক্টর) তৈরির পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন। জানা গিয়েছে, মাধবডিহি থানার বড় বৈনানে দেখা যাবে এমন আলো, যা বিটুমিনাসের সঙ্গে প্লাস্টিক-বর্জ্য মিশিয়ে তৈরি করা হবে। জেলা প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বশক্তিকরণ (আইএসজিপি) বিভাগ এই পরিকল্পনা নিয়েছে। সব ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ওই রাস্তার কাজ শেষ হয়ে যাবে। পাশাপাশি, মাধবডিহির উচালনের পরে ‘নীল রাস্তা’ তৈরি করল আইএসজিপি। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে মেমারির রায়বাটিতে ওই রাস্তার উদ্বোধন হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শুভলক্ষ্মী বসু বলেন, “প্লাস্টিক-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগানোর জন্যই এই ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পরিবেশবান্ধব রাস্তা তৈরি হচ্ছে।” আইএসজিপি-র জেলার কো-অর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, “জেলায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ইউনিট থেকেই রাস্তা তৈরির জন্যে আমরা প্লাস্টিক কিনেছি।” আইএসজিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিটুমিনাসের সঙ্গে বর্জ্য-প্লাস্টিক মিশিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তার সঙ্গে থার্মো-প্লাস্টিকের নীল রং, রাসায়নিক মিশিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মেমারি ২ ব্লকের রায়বাটি গ্রামের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কাছে ১৫০ মিটার রাস্তার রং নীল হয়েছে। মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতি রাজ্যের পঞ্চম অর্থ কমিশন থেকে ওই রাস্তার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। আইএসজিপি-র ইঞ্জিনিয়ার রাকেশকুমার ধারা বলেন, “এ ধরনের রাস্তায় বিটুমিনাসের সঙ্গে ৬% প্লাস্টিক বর্জ্য মেশানো হয়েছে। তাপ-বিকিরণ কম হবে এবং মরীচিকাও রাস্তায় থাকবে না।” মেমারির রাস্তার জন্যে ২৪০ কেজি প্লাস্টিক লেগেছে। আর মাধবডিহির বড় বৈনানে তৈরি হওয়া রাস্তায় ৫০ কেজি প্লাস্টিক লাগবে। আইএসজিপি সূত্রে জানা যায়, বড় বৈনানের পশড়া থেকে ঘড়ির ঢাল পর্যন্ত ৬০৫ মিটার রাস্তাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২৫০ মিটার রাস্তা কালোর বদলে হবে নীল রঙের। বাকি রাস্তা কালো হবে। তবে, ওই রাস্তার উপরে বিশেষ বর্জ্য মিশিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘লাইট রিফ্লেক্টর’ তৈরি করা হবে। যাতে অন্ধকারেও পথচলতি মানুষজন আলোর ছটা পান। সে জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে। জেলার কো-অর্ডিনেটর রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্যকে কী ভাবে আরও বেশি ব্যবহার করতে পারি, তার জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।” |
প্লাস্টিক বর্জনে গোটা রাজ্যের মধ্যে এক সময়ে অন্যতম মডেল হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীন বাঙুর। আজও সেখানে সেই ধারাই চলছে। তবে প্লাস্টিক বর্জনের এই সদিচ্ছা সীমাবদ্ধ রয়ে গিয়েছে বাঙুরেই। দমদমের তিন পুরসভা এলাকায় সর্বত্র সেই মডেল অনুসরণ করার চেষ্টা হলেও সে ভাবে সাফল্য আসেনি। লাগাতার সচেতনতার প্রচার, প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকায় নজরদারি থেকে শুরু করে জরিমানা আদায়ের কাজ হলেও এখনও প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহারে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ আসেনি। উত্তর দমদমে ছবিটা অনেকটা উজ্জ্বল হলেও আরও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। অন্তত তিন পুরসভার বিভিন্ন বাজার এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গার ছবি তেমনটাই বলছে। চলতি বছরে নিকাশি নালা সাফ করতে গিয়েও তিন পুর কর্তৃপক্ষের তেমনই উপলব্ধি। ওই তিন পুরসভা সূত্রের খবর, বাজার এলাকাগুলিতে আগের তুলনায় ১২০ মাইক্রনের থেকে কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার কমেছে। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ঠিক একই ভাবে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে খাবার সরবরাহের ব্যবসায় প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশি নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক মিলছে। কোথাও কোথাও প্লাস্টিকের জমে থাকার জেরে নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হওয়ার মত অবস্থাও হয়েছে। উত্তর দমদম পুরসভা ইতিমধ্যে বর্জ্য পৃথকীকরণে বিশেষ সাফল্য লাভ করেছে। পৃথক ভাবে পুজোর ফুল, বেলপাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই সূত্রেই সরকারি নির্দেশিকা মোতাবেক প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রী নিয়ন্ত্রণেও পদক্ষেপ করেছে পুরসভা। তাদের দাবি, প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে নজরদারি থেকে শুরু করে জরিমানা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস জানান, ব্যবসায়ী থেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ হচ্ছে। তবে তাঁদের সাড়া মিললেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মত পুরসভার। একই ভাবে সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট জানান, প্লাস্টিক বর্জনে পুরসভা একান্ত ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আশানুরূপ সাড়া এখনও মেলেনি। সেখানেও নিকাশি নালা সাফ করতে গিয়ে মিলছে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক। যদিও বাসিন্দাদের বড় অংশের দাবি, পার্শ্বস্থ বিভিন্ন পুর এলাকায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি পুর এলাকায় এই কাজ পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাই সমস্ত জায়গায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে হলে তার উৎপাদন বন্ধ করা আগে জরুরি। পাশাপাশি বাসিন্দাদের দাবি, বিকল্প সামগ্রীর জোগানও বাজারে থাকা প্রয়োজন। সেখানেই প্রশ্ন ওঠে যে, একই সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়েও বাঙুর এলাকায় কী ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে পারছেন বাসিন্দারা? এক সময় দক্ষিণ দমদমের প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্লাস্টিক বর্জনে সফল হয়েছিল বাঙুর। সেখানে এই বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি এবং তৎপরতা চোখে পড়ে। বর্তমানে স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি বনশ্রী চট্টোপাধ্যায় জানান, প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দারাও সাড়া দিয়েছেন তাতে। সেই কারণেই সাফল্য এসেছে। কোনও সময় প্লাস্টিক ব্যবহারের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়। দমদমের অন্যান্য এলাকায় বাঙুর মডেল কেন অনুসরণ করা যাচ্ছে না? দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ সঞ্জয় দাসের দাবি, বাঙুর এলাকার সব স্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। পুরসভার বাকি এলাকায় এখনও সেই অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। পুরসভা এলাকার মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও লাগোয়া অন্যান্য পুর এলাকা থেকে প্লাস্টিকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। তবুও প্রচার থেকে শুরু করে নজরদারিতে জোর বাড়িয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চলছে। |
আইন শুধু খাতায়-কলমেই! ২০২২ সালে ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। অথচ, তার এক বছর পরেও শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে এখনও ‘নিষিদ্ধ’ প্লাস্টিকের রমরমা চোখে পড়ার মতো। পুরসভার তরফে স্রেফ দায়সারা প্রচার করেই কাজ সারা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ পেয়ে প্রথমে পুরসভা ঠিক করেছিল, প্লাস্টিক ব্যবহারে যাঁরা নিয়মভঙ্গ করবেন, সেই সমস্ত বিক্রেতাকে ৫০০ টাকা ও ক্রেতাদের ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। পুরসভার বাজার দফতরের তরফে সেই জরিমানা আদায় করার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই জরিমানা আদায় করা হয়নি। তবে, বাজারে এখনও ১২০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের সাফাই, ‘‘প্লাস্টিক বাইরের রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ঢুকছে। ওই প্লাস্টিক কে আটকাবে? নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বিক্রি বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন না করলে পাতলা প্লাস্টিক বন্ধ করা খুব মুশকিল।’’ আইন হলেও আজও শহর কলকাতার বাজার-দোকানে দেদার ব্যবহৃত হচ্ছে পাতলা প্লাস্টিক। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, এই সমস্ত প্লাস্টিক যত্রতত্র পড়ে থেকে বিপদ ডেকে আনে। বিশেষত, নিকাশি নালার গালিপিটে তা আটকে গিয়ে বর্ষায় জল জমছে এলাকায়। পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, আগের তুলনায় এখন ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণই হল, প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নিকাশির পথ অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়া। অথচ, ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা পেয়ে প্রথম প্রথম পুরসভার তরফে প্রচার চালানো হয়েছিল। পরে সেই প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি, পুরসভার প্রতিশ্রুতি মতো পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহারকারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে জরিমানা নেওয়ার কাজটাও শুরু করা হয়নি। কিন্তু কেন? পুর পরিবেশ বিভাগের আধিকারিকদের পাল্টা যুক্তি, শহরে পুকুর ভরাট ঠেকানো, হেরিটেজ ভবন রক্ষার দায়িত্ব-সহ একাধিক কাজ ওই বিভাগের মাত্র ২০ জন কর্মী-আধিকারিকের কাঁধে রয়েছে। তাঁদেরই এক জনের অভিযোগ, ‘‘এত কম লোকবল নিয়ে দফতরের একাধিক কাজ সামলানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’’ আবার পাতলা প্লাস্টিকের ব্যবহার ঠেকাতে জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে বাজার ও লাইসেন্স বিভাগকেও পরিবেশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার কথা বলা হয়েছিল। অভিযোগ, গত এক বছরে সেই কাজও বিন্দুমাত্র হয়নি। যদিও মেয়র পারিষদের (পরিবেশ) যুক্তি, ‘‘শুধু জরিমানা করে কাজের কাজ হবে না। নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে কেন্দ্রকে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। যাতে কারখানায় পাতলা প্লাস্টিক তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করা যায়।’’ |
ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে। চলমান ডিসেম্বের মাসে একাধিকবার বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে শহরটি। ২০২৩ সালের শেষ দিনটিতেও এই তালিকার শীর্ষেই রইল ঢাকার অবস্থান। রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২৪৮ নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। এই একিউআই স্কোরের মানে হলো, রাজধানীর বাতাসের মান “খুব অস্বাস্থ্যকর” অবস্থায় রয়েছে। এর আগে চলমান ডিসেম্বের মাসে একাধিকবার এই তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। রবিবার সকালে ভারতের দিল্লি, চীনের সাংহাই এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সারাজেভো যথাক্রমে ২৪৩, ২৩৫ এবং ২২৭ এর একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে “অস্বাস্থ্যকর” বলে মনে করা হয়। এছাড়া, ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে “খুব অস্বাস্থ্যকর” এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে “ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। ঢাকার বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। এ বছর একাধিকবার দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। |
ডায়মন্ড হারবার শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে কঠোর পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে পুরসভা ও প্রশাসন। পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজার ছাড়াও আরও কয়েকটি ছোট বাজার বসে। সেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে পুরসভা ও প্রশাসন থেকে প্রচার চালানোর পাশাপাশি দোকানিদের উপরে নজরদারি চালানো হত আগে। লিফলেট বিলি, মাইকে প্রচার চলত। জরিমানাও করা হত। কয়েক মাস ধরে সেই কাজে ঢিলেমি দেখা যাচ্ছিল বলে জানালেন পুরবাসী। এই পরিস্থিতিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার ফের বেড়েছে। পথঘাট, নিকাশি নালা ভরে যাচ্ছে প্লাস্টিকের স্তূপে। প্লাস্টিক উড়ে পড়ছে নদীর জলেও। তাতে দূষণ ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক, থার্মোকলের ব্যবহার কমাতে জোরকদমে নেমেছে পুরসভা। তবে দোকানিরা জানালেন, বেশ কিছু খদ্দের ব্যাগ ছাড়াই বাজারে আসেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিতে হয়। সকালে বহু মানুষ নদীর পাড়ে প্রাতর্ভ্রমণ সেরে ফেরার পথে প্লাস্টিকের ব্যাগে বাজার নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। প্লাস্টিকের ক্যারিবাগের দাম কম হওয়ায় দোকানিরাও তা সহজে দিয়ে দেন। তবে ইদানীং অনেক ব্যবসায়ী জানালেন, পুরসভার নিষেধাজ্ঞার জেরে তাঁরা প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন না। ডায়মন্ড হারবার স্টেশন বাজারের দোকানি বিমল দাসের কথায়, ‘‘আমরাও চাই, ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে আসুন। কিন্ত কিছু ক্রেতা খালি হাতে এলে তাঁদের ফেরাতে পারি না। এঁদের জন্যই বাধ্য হয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিবাগ ব্যবহার করতে হয়।’’ পুরপ্রধান প্রণব দাস বলেন, ‘‘পলিথিন ব্যবহারের বিষয়ে সাধারণ মানুষের একটু সচেতন হওয়া উচিত। তাঁরা ব্যাগ নিয়ে বাজারে গেলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। আগে নজরদারি চালিয়ে অনেক কমে গিয়েছিল এর ব্যবহার। এ বার ফের এই কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে। দোকানিদের বলা হয়েছে, ১২০ মাইক্রোনের নীচে পলিথিন ব্যবহার করলে জরিমানা করা হবে।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের গ্লাস, কাপ ও থালা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। লাগাতার অভিযান চালানো হবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মানুষ যেমন পলিথিন ব্যবহার করছেন, তেমনই গ্রামীণ এলাকা থেকে সারা দিনে হাজার হাজার মানুষ ডায়মন্ড হারবার শহরে এসে পলিথিন ফেলে যাচ্ছেন। পুরসভার কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্লাস্টিক সাফাই অভিযানে যোগ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও, মাইকে প্রচার করা হচ্ছে, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে।’’ |
যুদ্ধে নেমেছে ইজ়রায়েল। তাতে চিন্তায় পড়েছিল হুগলি জেলার উদ্যানপালন দফতর। কারণ, ইজ়রায়েলের প্রযুক্তিতে এবং সেখানকার কৃষি বিশেষজ্ঞদের সরাসরি পরামর্শে এখানে পলিহাউস চাষের একটি প্রকল্প চলছে। যুদ্ধের কারণে পাছে প্রকল্প থমকে যায়, চিন্তা ছিল এটাই। তবে তা হয়নি। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের আঁচ এতে পড়েনি। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে রয়েছে জেলা উদ্যানপালন দফতরের কার্যালয়। গবেষণাও চলে। গত বছর থেকে এখানে ‘ইন্দো-ইজ়রায়েল সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ভেজিটেবলস’ প্রকল্পে পলিহাউসের (পোশাকি নাম, গ্রিন হাউস) মাধ্যমে অসময়ের আনাজ চাষ শুরু হয়। প্রযুক্তি ইজ়রায়েলের। প্রকল্পের খরচের ৬০ শতাংশ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি জোগাচ্ছে রাজ্য। হুগলির ভারপ্রাপ্ত উপ-উদ্যানপালন অধিকর্তা শুভাশিস গিরি বলেন, ‘‘যুদ্ধের কোনও আঁচ এই প্রকল্পে পড়েনি। ইজ়রায়েল থেকে বিজ্ঞানীরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখছেন।’’ পলিহাউসে বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, চেরি, টোম্যাটো, বীজহীন শসা প্রভৃতির দু’বার করে ফলন হয়ে গিয়েছে। সুফল বাংলা স্টলের মাধ্যমে তা বিক্রি করা হয়েছে বলে হুগলির সহ-উদ্যানপালন অধিকর্তা সাত্যকি মণ্ডল জানান। সাত্যকি আরও জানান, এই পদ্ধতিতে চার দিকে প্লাস্টিক অথবা জালের ছাউনি থাকায় সূর্যের তাপ সরাসরি খেতে ঢুকতে পারে না। ফলে শীতের আনাজ গরমেও ফলানো যায়। জলের অপচয় ঠেকানো যায়। সার দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে। প্লাস্টিকের চাদর থাকায় দুর্যোগের প্রকোপও ঠেকানো সম্ভব হয়। ন্যাচরালি ভেন্টিলেটেড (প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলযুক্ত), ইনসেক্ট প্রুফ নেট হাউস (পোকা প্রতিরোধক), ওয়াক ইন টানেল (এক জন ভিতরে ঢুকতে পারবেন) এবং হাইটেক (চারা তৈরি হয়) এই চার রকম পলিহাউস হয়। চুঁচুড়ায় তৈরি মোট ২১টি হাউসের মধ্যে চার ধরনই রয়েছে। ৫০০ থেকে ১০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে এগুলি করা হয়েছে। জেলার চাষিদের এখানে এই চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানান, বাঁশ দিয়ে তৈরি তুলনামূলক কম খরচের পলিহাউস কম টেকসই। ইজ়রায়েলি পদ্ধতিতে ‘টিউবিউলার স্ট্রাকচার পলিহাউস’ তৈরি জিআই পাইপ দিয়ে, যা ১২-১৪ বছর টিকে থাকে। ৫০০ বর্গমিটারের একটি পলি হাউস তৈরিতে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। পুরো পদ্ধতি করতে পারলে রাজ্য সরকার ৫০ শতাংশ দেয়। সাত্যকির বক্তব্য, এই পদ্ধতিতে সব ধরনের চাষ হলেও খরচসাপেক্ষ হওয়ায় অসময়ের আনাজ চাষ চাষিদের পক্ষে বেশি লাভজনক হবে। শুভাশিস বলেন, ‘‘ইজ়রায়েলের বিশেষজ্ঞেরা প্রযুক্তির বিষয় দেখিয়ে গিয়েছেন। এখন হোয়াটসঅ্যাপে তাঁরা পরামর্শ বা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তবে, হাতেকলমে আরও কিছু খুঁটিনাটি জিনিস দেখাতে এখনও তাঁদের আসার প্রয়োজন আছে। আশা করছি শীঘ্রই তাঁরা আসবেন।’’ |
২০১০ সালের চেয়ে ২০২৫ সালে বঙ্গোপসাগরে পাঁচগুণ বেশি প্লাস্টিক পাওয়া যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সমুদ্রে প্লাস্টিকের তীব্র দূষণ ঘটেছে বলেও শঙ্কা জানান। সম্প্রতি “এসডিজি ক্যাফে” শিরোনামে আয়োজিত এক মাসিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা জানান। ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিষ্ঠাতা ড. শাহরিয়ার হোসেন এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। দূষণের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়েও আলোকপাত করেন তিনি। ড. শাহরিয়ার সামুদ্রিক বর্জ্য ও মাইক্রো-প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কিত ইউএনইপির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। তিনি মার্কারি-ফ্রি ডেন্টিস্ট্রির জন্য ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্সের নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্টও। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা মূল সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি। এজন্য প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার কমাতে হবে।” “এসডিজি ক্যাফে”-এর চতুর্থ সভায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি এস ১২ ও ১৪) এর অংশ হিসেবে এ আলোচনার মূল বিষয় ছিল “সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: প্রভাব ও সমাধান।” বিশ্বজুড়ে পরিবেশের বড় এক হুমকির নাম প্লাস্টিক দূষণ। আর এই দূষণের বড় এক ভুক্তভোগী দক্ষিণ এশিয়া। জলাশয়ে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণের জন্য বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে থাকা বাংলাদেশ পরিবেশগত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-১২ ও এসডিজি-১৪ অর্জনে পরিবেশগত এই সঙ্কট জরুরি সমাধানের প্রতি জোর দেন বক্তারা। বাংলাদেশে ইউএনওপিএসের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন দূষণের অবস্থা অনুধাবন করে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা, মানব স্বাস্থ্য, উপকূলীয় পর্যটন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও বড় ক্ষতিকর ভূমিকা রাখে।।” তিনি আরও বলেন, “প্লাস্টিক দূষণের কারণে সারা বিশ্বই সঙ্কটের মুখে। দক্ষিণ এশিয়া বার্ষিক ৩৩৪ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য নিঃসরণ করে। এরমধ্যে ৭০%-৮০% আমাদের জলাশয়ে চলে যায়। যার মধ্যে ১২% প্লাস্টিক বর্জ্য। ফলে এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।।” তিনি বলেন, “নদী ও খালে প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।।” ইউএনওপিএস দক্ষিণ এশিয়া মাল্টি-কান্ট্রি অফিসের পরিচালক চার্লস ক্যালানান প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় অবিলম্বে জোর দেন। তিনি বলেন, “বছরে ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে প্রবেশ করে। এসব সমস্যা সমাধানে এসডিজি ক্যাফের মতো আলোচনা ও সহায়তা দরকার।।” এসডিজি ক্যাফের এসব আলোচনায় দেশের সংশ্লিষ্ট নানা বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা অংশ নিচ্ছেন। |
প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জোর বাড়ানো হয়েছে এবং মাঝেমধ্যেই বাজার ও দোকানে নিয়মিত অভিযান চলে। পুরসভা এমন দাবি করলেও খালে, জলাশয়ে, যত্রতত্র আবর্জনায় প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর দেখা মিলছে। পুজোর পরে এমন ছবি দেখা গিয়েছে দমদম ও দক্ষিণ দমদমের একাধিক জায়গায়। চলতি বছরে ওই দুই এলাকায় ডেঙ্গিতে কয়েক হাজার বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন। ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, খালে, জলাশয়ে ভাসতে থাকা কাগজের কাপ, থার্মোকল-সহ প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর মধ্যে জল জমে ফের তা মশার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হতে পারে। যদিও পুর প্রশাসনগুলির দাবি, বছরভর লাগাতার তারা সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে। নিমিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সচেতনতার প্রচারেও জোর বাড়ানো হয়েছে। তাই পুজোর কারণেই প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার ফের বেড়েছে বলে মনে করছেন সকলে। পুজোর ফুল, পাতা ফেলতে যেমন প্লাস্টিকের ব্যবহার হয়েছে, তেমনই মণ্ডপসজ্জা থেকে খাবার সরবরাহ, সবেতেই দেদার ব্যবহৃত হয়েছে সেই নিষিদ্ধ প্লাস্টিকই। দমদমের এক বাসিন্দা শুভেন্দু ঘোষের কথায়, ‘‘যে সব জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে, সেখানে দ্রুত কাঠামো তোলা হয়েছে। পুজোর ফুল-পাতা জলে ফেলতে দেওয়া হয়নি। এটা খুব ভাল প্রচেষ্টা। কিন্তু তার বাইরে একাধিক জলাশয়ে ভাসছে আবর্জনা। তার মধ্যে পুজোর ফুল-পাতা থেকে থার্মোকল ও প্লাস্টিকের কাপ, বাটিও রয়েছে।’’ আর এক বাসিন্দা দেবব্রত দে বলছেন, ‘‘আমাদেরও দোষ আছে। পুজোর সময়ে দোকান থেকে খাবার প্লাস্টিকের বাটিতে আনা হয়েছে। পুরকর্মীরা নিয়মিত আবর্জনা তুললেও লক্ষ্মীপুজোর পরে ফুল-পাতা প্লাস্টিকে মুড়েই জলে ফেলা হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, বিকল্পের প্রয়োজন।’’ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট জানান, এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে। অনেকটাই সাড়া মিলেছে। তাই তুলনায় অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। পুজোর সময়ে প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার বেশি হয়েছে বলে পুনরায় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলেই জানিয়েছেন তিনি। একই সুরে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পরিবেশ) মুনমুন চট্টোপাধ্যায় জানান, নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ, বর্জ্য পৃথকীকরণ, প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রীর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অভিযানের ফলে আগের থেকে অনেকটাই বেশি সাড়া মিললেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই পুরসভার চেষ্টায় আরও গতি বাড়ানো হবে। তবে এই সমস্যা মেটাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করছেন তিনি। |
দক্ষিণ কলকাতার যে সব পুজোগুলিতে না গেলেই নয়, তার মধ্যে সুরুচি সঙ্ঘের নাম থাকে একদম শুরুর দিকে। প্রতি বছর তারকাদের মেলা বসে এই পুজোয়। আর থিমে চমক তো রয়েছেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান এই মণ্ডপে। এই বছরে এদের পুজোর ৭০ তম বর্ষ। এই বছরে থিমে আছে পরিবেশবান্ধব দিকটিও। প্লাস্টিক বর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই এই বছরের থিম হিসাবে বেছে নিয়েছে এই পুজো। থিমের নাম ‘মা তোর একই অঙ্গে এত রূপ’। শুধু পুজো মণ্ডপ নির্মাণে নয় প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সারা বাংলা জুড়ে যে হোর্ডিং, প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যবহার করেছেন এঁরা। দর্শনার্থীরাও যাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার না করেন সেই ডাক দিয়েছে এই পুজোর মাধ্যেমে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ। |
পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি নিয়ে এ বার অনেকটাই সচেতন আরামবাগ মহকুমার অনুমোদনপ্রাপ্ত পুজোগুলো। অল্প-বিস্তর থার্মোকলের দেখা মিললেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। একেবারেই থার্মোকল-প্লাস্টিক বর্জন করে বিশেষ দৃষ্টান্ত তৈরি করল খানাকুলের ঘোষপুর শিক্ষাকেন্দ্র এবং গ্রামবাসীবৃন্দর পরিচালনায় সর্বজনীন পুজো কমিটি।ঘোষপুর হাইস্কুল মাঠে তৈরি ওই মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে বাঁশ, বেত, মাটি, পাট, বস্ত্র, শীতলপাটি ও মাদুর। সঙ্গ দিয়েছে কুলো, ঝুড়ি, গাছের ডালপালাও। পুজোর থিম, ‘ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন এবং প্লাস্টিক-থার্মোকল বর্জন’। এ বছর ৫৭ বছরে পা দেওয়া পুজো কমিটির সম্পাদক হায়দার আলি বলেন, ‘‘পরিবেশ নিয়ে নিজেরা সচেতন হলে যে প্লাস্টিক বর্জন সম্ভব, তা বোঝা গেল। ৮ লক্ষ টাকা বাজেটের মধ্যেই পরিবেশ বান্ধব এবং একইসঙ্গে আকর্ষনীয় মণ্ডপ তৈরি হয়েছে।’’ মণ্ডপ চত্বর জুড়ে পরিবেশ রক্ষায় নানা সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। খানাকুলের পলাশপাই তরুণ দলের পুজোয় প্লাস্টিক, থার্মোকল ব্যবহার না করলেও কিছু ফোম ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান, কমিটির সম্পাদক সন্দীপ কারক। এই পুজোর থিম ‘স্বপ্নের উড়ান’। আরামবাগ শহরের দৌলতপুর যুবশক্তি নাট্য মন্দির গোষ্ঠীর পুজো কমিটির পুজো মণ্ডপে শুধুমাত্র নামের ফলকে থার্মোকলের ব্যবহার রয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক সজল কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা টানা চার বছর ধরে প্লাস্টিক বর্জন করেছি। এ বার থার্মোকলও প্রায় বন্ধ করছি।’’ মহকুমায় অনুমোদনপ্রাপ্ত মোট পুজো ৫৯২টি জানিয়ে এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “পুজো মণ্ডপে প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সহ বিভিন্ন সরকারি শর্তাবলী নিয়ে পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শর্তাবলী না মানলে পরবর্তী কালে সংশ্লিষ্ট পুজোর অনুমতি বাতিল হবে। ধারাবাহিক ভাবে সচেতনতা প্রচারও চলছে।’’ |
@misc{wasi2024dhoroniexploringbengaliclimate,
title={Dhoroni: Exploring Bengali Climate Change and Environmental Views with a Multi-Perspective News Dataset and Natural Language Processing},
author={Azmine Toushik Wasi and Wahid Faisal and Taj Ahmad and Abdur Rahman and Mst Rafia Islam},
year={2024},
eprint={2410.17225},
archivePrefix={arXiv},
primaryClass={cs.CL},
url={https://arxiv.org/abs/2410.17225},
}