Datasets:
n_id
string | doc_id
string | lang
string | text
string |
---|---|---|---|
mkb-1 | b985c9f029d75cbaa40de16d6b59c967effd18df75d43b3f0ec9c4962c553313 | ben | আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আবার এক বার আপনাদের অনেক-অনেক স্বাগত জানাই। আজ এই চর্চা শুরু করতে গিয়ে মন-মস্তিষ্কের মধ্যে কতই না ভাব উঠে আসছে। আমার এবং আপনাদের মন কি বাতের এই জুটি, নিরানব্বইতম পর্বে এসে পৌঁছেছে। সাধারণভাবে আমরা শুনে থাকি যে নিরানব্বইয়ের বাধা খুব কঠিন হয়। ক্রিকেটে তো নার্ভাস নাইনটিজ-কে খুব কঠিন একটা পর্যায় ধরা হয়। কিন্তু যেখানে ভারতের প্রতিটি মানুষের ‘মন কি বাত’ রয়েছে সেখানকার প্রেরণা থেকে অন্যতর কিছু হয়। আমি এটা নিয়েও খুশি যে মন কি বাতের শততম পর্ব নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে। আমি অনেক বার্তা পাচ্ছি, ফোন আসছে। আজ যখন আমরা আজাদি কা অমৃতকাল উদযাপন করছি, নতুন সঙ্কল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, তখন শততম মন কি বাত নিয়ে আপনাদের পরামর্শ আর সিদ্ধান্ত জানার জন্য আমিও খুব উৎসুক হয়ে আছি। এরকম পরামর্শের জন্য অধীর অপেক্ষা রয়েছে আমার। এমনিতে তো অপেক্ষা প্রতি বারই থাকে তবে এবার সেটা একটু বেশি। আপনাদের এই পরামর্শ আর সিদ্ধান্তই তিরিশে এপ্রিল সম্প্রচার হতে চলা শততম মন কি বাতকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা এমন হাজার-হাজার মানুষের কথা বলেছি যাঁরা অন্যের সেবায় নিজেদের জীবন সমর্পণ করেন। কিছু মানুষ এমন থাকেন যাঁরা নিজের কন্যার শিক্ষার জন্য পুরো পেনশন খরচ করে ফেলেন, কেউ কেউ পরিবেশ আর জীবসেবার জন্য নিজের গোটা জীবনের আয় সমর্পণ করে দেন। আমাদের দেশে পরমার্থকে এত উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে যে অন্যের সুখের জন্য মানুষ নিজের সর্বস্ব দান করে দিতেও সঙ্কোচ করে না। এই জন্য তো শৈশব থেকেই আমাদের শিবি আর দধীচির মতো দেহ দানকারীদের কাহিনী শোনানো হয়।
বন্ধুরা, আধুনিক মেডিকেল সায়েন্সের এই পর্যায়ে অর্গান ডোনেশন যে কোনো মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার অত্যন্ত বড় একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বলা হয়, যখন একজন মানুষ মৃত্যুর পরে নিজের শরীর দান করে, তখন সেটা থেকে আট থেকে ন’জন মানুষের নতুন জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তৃপ্তির কথা যে আজ দেশে অর্গান ডোনেশনের ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। ২০১৩ সালে আমাদের দেশে অর্গান ডোনেশনের ঘটনা পাঁচ হাজারেরও কম ছিল, কিন্তু ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে পনেরো হাজারেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। অর্গান ডোনেশন করা ব্যক্তি, তাঁদের পরিবার সত্যিই বড় পুণ্যের কাজ করেছেন।
বন্ধুরা, বহুদিন ধরে আমার ইচ্ছে ছিল যে আমি এমনই পুণ্যবান মানুষদের ‘মন কী বাত’ জানব এবং দেশবাসীর সঙ্গে তা ভাগ করে নেব। তাই আজ ‘মন কি বাত’-এ আমাদের সঙ্গে একজন মিষ্টি মেয়ে, সুন্দর মেয়ের বাবা এবং তার মা যুক্ত হতে চলেছেন। বাবার নাম সুখবীর সিং সন্ধু জী আর মায়ের নাম সুপ্রীত কৌর জী, তাঁরা থাকেন পাঞ্জাবের অমৃতসরে। অনেক প্রার্থনা করে তাঁদের একটি খুব সুন্দর কন্যা সন্তান হয়েছিল। পরিবারের সবাই খুব আদর করে তার নাম রেখেছিল অবাবত কৌর। অবাবতের অর্থ অন্যদের যে সেবাকার্য করে, অন্যদের কষ্ট দূর করে। অবাবতের বয়স যখন মাত্র ৩৯ দিন, তখন সে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সুখবীর সিং সন্ধুজী, তাঁর স্ত্রী সুপ্রীত কৌরজী এবং তাঁদের পরিবার একটি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ঠিক করেন যে ৩৯ দিন বয়সী তাঁদের কন্যাসন্তানের অঙ্গদান করবেন, Organ Donation করবেন। আমাদের সঙ্গে ফোন লাইনে সুখবীর সিং সন্ধুজী এবং তাঁর শ্রীমতি উপস্থিত আছেন। আসুন, ওঁদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জী – সুখবীর জী নমস্কার।
সুখবীর জী – নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। সৎ শ্রী অকাল।
প্রধানমন্ত্রী জী – সৎ শ্রী অকালজী, সৎ শ্রী অকালজী। সুখবীর জী, আজ আমি ‘মন কি বাত ‘ সম্বন্ধে ভাবছিলাম তো আমার মনে হলো যে অবাবতের কাহিনী এতটাই প্রেরণা দেয় যে সেটা আপনার মুখ থেকেই শুনি, কারণ পরিবারে যখন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, তখন তা অনেক স্বপ্ন, অনেক আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু মেয়ে যখন এত কম বয়সে ছেড়ে চলে যায় সেই কষ্ট কতটা ভয়ংকর, তা আমি কল্পনা করতে পারি। কীভাবে আপনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সেই সবটাই আমি জানতে চাই।
সুখবীর জী – স্যার ভগবান আমাদের একটি ফুটফুটে সন্তান দিয়েছিলেন, আমাদের বাড়িতে একটি খুব সুন্দর পুতুল এসেছিল। তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জানতে পারি যে তার মস্তিষ্কে স্নায়ুর এক এমন গঠন রয়েছে, যার কারণে তার হৃৎপিণ্ডের আকার বড় হচ্ছে। আমরা আশ্চর্য হয়েছিলাম যে শিশুটির স্বাস্থ্য এত ভাল, এত সুন্দর একটি শিশু কিন্তু সে এত বড় সমস্যার সঙ্গে জন্ম নিয়েছে। তারপর প্রথম ২৪ দিন সে খুব ভাল ছিল, শিশুটি একেবারে স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ তার হৃদপিন্ড পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তাররা তাকে revive করলেও, সময় লেগে যায় এটা বুঝতে যে তার কী এমন বড় সমস্যা আছে যে একটি ছোট শিশুর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য পিজিআই চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটি বীরত্বের সঙ্গে আরোগ্যের জন্য লড়াই করে। কিন্তু অসুখটা এমন যে তার চিকিৎসা এত অল্প বয়সে সম্ভব নয়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেন তাকে রিভাইভ করতে। যদি বাচ্চা ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি যায় তাহলে অপারেশন করার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ভগবানের অন্য ইচ্ছে ছিল। মাত্র ৩৯ দিনেই সে আবার হার্ট আট্যাকের শিকার হয় এবং এবার ডাক্তারেরা জানান তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা স্বামী-স্ত্রী শোক সন্তপ্ত অবস্থায় ভেবে দেখলাম, এই শিশু বারবার অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আবার ফিরে আসছে, মানে এর জন্ম নেওয়ার নিশ্চয়ই কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে। এর পর ডাক্তারেরা যখন একেবারেই জবাব দিয়ে দেয়, তখন আমরা ওর organ donate করার সিদ্ধান্ত নিই। অন্য কারো জীবন উদ্ধার হোক। আমরা তারপর PGI.এর administrative বিভাগে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানায় এত ছোটো বাচ্চার কেবল কিডনি নেওয়া সম্ভব। পরমাত্মার কাছে শক্তি প্রার্থনা করে, গুরু নানকজী কে স্মরণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
প্রধানমন্ত্রীজি – আমাদের গুরুরা যে শিক্ষা দেন, আপনারা তা পালন করে দেখালেন। সুপ্রিতজি আছেন কি? ওনার সঙ্গে কথা বলা যাবে?
সুপ্রিতজি – হ্যালো।
প্রধানমন্ত্রী জি- সুপ্রিতজি; আমি আপনাকে প্রণাম জানাই।
সুপ্রিতজি – নমস্কার স্যার, নমস্কার। আমাদের কাছে এ পরম গর্বের বিষয় যে আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি – আপনারা এত বড় একটা কাজ করেছেন, আমার বিশ্বাস দেশের মানুষ যখন একথা জানতে পারবে তখন কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আরো অনেকে এগিয়ে আসবেন। অবাবত এর এই অব্দান অনেক বড়।
সুপ্রিতজি – স্যার, এটাও হয়তো গুরু নানক জির আশীর্বাদ ছিল, উনিই এই সিদ্ধান্ত নেবার শক্তি দেন।
প্রধানমন্ত্রী জি – গুরুর কৃপা ছাড়া তো কিছুই সম্ভব নয়।
সুপ্রিতজি – একদম স্যার, একদম।
প্রধানমন্ত্রী জি – সুখবীরজি, আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন এবং ডাক্তার যখন আপনাকে এই মর্মান্তিক খবর দিয়েছিলেন, তার পরেও আপনি এবং আপনার স্ত্রী সুস্থ মন নিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা গুরুদেরই শিক্ষা যে আপনারা এত উদার মনের অধিকারী এবং সত্যি কথা বলতে কী, অবাবত শব্দের অর্থ সহজ ভাষায় হল উপকারী ব্যক্তি। আমি সেই মুহূর্তের কথা শুনতে চাই যখন আপনারা এই কাজটা করলেন।
সুখবীরজি – স্যার, আসলে আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু আছেন, প্রিয়াজি, তিনি তাঁর অঙ্গ দান করেছিলেন। আমরা তাঁর কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তাই সেই সময় আমরা অনুভব করেছি যে আমাদের এই দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে। কেউ যখন আমাদের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেয়, বা চলে যায়, তখন তার দেহকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বা কবর দেওয়া হয়। কিন্তু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি অন্য কারো কাজে লাগে, তাহলে তো তা মহৎ কাজ। এবং সেই সময় আমরা আরও গর্ব বোধ করি যখন ডাক্তারবাবুরা আমাদের বলেছিলেন যে আপনার মেয়ে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অর্গান ডোনার, যার অঙ্গ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তখন আমরা গর্বিত হই এই ভেবে যে আমরা এত বয়স পর্যন্ত আমাদের বাবা-মায়ের নাম উজ্জ্বল করতে পারিনি। সেখানে একটি ছোট্ট শিশু এসে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে এবং এছাড়াও বড়ো কথা হল, আজ আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছি। আমরা গর্ববোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী জি – সুখবীরজি, আজ আপনার মেয়ের একটা অঙ্গই বেঁচে আছে, তা নয়। আপনার মেয়ে হয়ে উঠেছে মানবতার অমর গাথার অমর পথিক। শরীরের একটি অঙ্গের মাধ্যমে সে আজও বর্তমান। এই মহৎ কাজের জন্য আমি আপনার, আপনার স্ত্রী এবং আপনার পরিবারের প্রশংসা করি।
সুখবীরজি – আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, অঙ্গদানের জন্য সবচেয়ে বড়ো যে আবেগ কাজ করে তা হল, চলে যেতে যেতে শেষ সময়ে কারো উপকার করা, কারো জীবন রক্ষা করা। যাঁরা দান করা অঙ্গ পাবার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা জানেন অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত পার করা কতটা কঠিন। আর এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনো অঙ্গদাতা বা দেহদানকারী পাওয়া যায়, তখন তাঁর মধ্যে ঈশ্বরেরই রূপ দেখা যায়। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা স্নেহলতা চৌধুরীও এমনই ছিলেন, যিনি ঈশ্বর হয়ে অন্যদের জীবন দিয়েছেন। ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী নিজের তাঁর হার্ট, কিডনি ও লিভার দান করেগিয়েছেন। আজ ‘মন কি বাতে’, তাঁর ছেলে অভিজিৎ চৌধুরী আমাদের সঙ্গে আছেন। আসুন তাঁর কথা শুনি।
প্রধানমন্ত্রী জি – অভিজিৎজি নমস্কার।
অভিজিৎ জি – প্রণাম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি – অভিজিৎ জি, আপনি এমন এক মায়ের সন্তান তিনি আপনাকে তো জন্ম দিয়েছেনই, এমনকি নিজের মৃত্যুর পরেও অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। একজন ছেলে হিসেবে আপনার তো নিশ্চয়ই ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে।
অভিজিৎ জি – অবশ্যই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি – আপনি আপনার মায়ের বিষয়ে কিছু বলুন, ঠিক কি পরিস্থিতিতে Organ donation-এর সিদ্ধান্ত নিলেন?
অভিজিৎ জি – ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা নামের এক ছোট্ট গ্রামে আমার বাবা-মা থাকতেন। বিগত ২৫ বছর ধরে তারা নিয়মিত morning walk করতেন ও নিজেদের habit অনুসারে সকাল চারটে morning walk-এর জন্য বেরিয়ে পড়তেন। একদিন এক motor cycle-ওয়ালা হঠাৎ পেছনে ধাক্কা মারায় মা পড়ে যান ও মাথায় অনেক বেশি চোট পান। তৎক্ষণাৎ আমরা তাঁকে সরাইকেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই যেখানে ডাক্তারবাবু মায়ের চিকিৎসা করেন কিন্তু তবুও প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আর মায়ের কোন sense ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাকে Tata main hospital-এ নিয়ে চলে আসি। সেখানেই তার সার্জারি হয়, 48 ঘন্টা observation-এর পর ডাক্তারবাবুরা জানালেন, এখানে বাঁচার সম্ভবনা খুবই কম। আবার আমরা তাঁকে airlift করে AIIMS Delhi-তে নিয়ে যাই। ওখানে তাঁর treatment চলে প্রায় সাত-আট দিন ধরে। এরপর মায়ের position ভালো ছিল, হঠাৎই তাঁর blood pressure ভীষণ কমে যায় ও পরে জানা যায় তাঁর brain death হয়েছে। এরপর ডাক্তারবাবুরা আমাদের প্রোটোকল সমেত brief করলেন organ donation সম্পর্কে। আমরা আমাদের বাবাকে হয়তো কখনো বোঝাতে পারতাম না organ donation type-এর মতো কোন জিনিস হয়, কারণ আমাদের মনে হয়েছিল উনি হয়তো এই বিষয়টা ঠিক মেনে নিতে পারবেন না, তাই এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা সম্পর্কে বাবাকে প্রথমে জানাইনি। যখনই বাবাকে বললাম যে মায়ের organ donation-এর বিষয়ে কথা হচ্ছে তখন উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন যে তোমাদের মায়ের ভীষণ ইচ্ছে ছিল এই কাজ করার, তাই আমাদের এটা করতেই হবে। আমরা অনেক নিরাশ ছিলাম সেই সময় পর্যন্ত যখন আমরা জানতে পেরেছিলাম যে মা আর বাঁচবেন না, কিন্তু যখন এই অর্গান ডোনেশন সম্বন্ধীয় ডিসকাশন শুরু হলো তখন সেই নিরাশা একটি অত্যন্ত পজিটিভ দিকে চলে গেল আর আমরা এক অত্যন্ত পজিটিভ পরিবেশে অবতীর্ণ হলাম। এটা করতে করতে রাত আটটার সময় আমাদের কাউন্সিলিং হল। পরের দিন আমরা অর্গান ডোনেশন করলাম। এই ব্যাপারে মায়ের একটা বড় ভাবনা ছিল যে প্রথমে, উনি চক্ষুদান ও এইরকম সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিসে অনেক বেশি অ্যাক্টিভ ছিলেন। হয়তো এই ভাবনার জন্যই আমরা এত বড় একটা কাজ করতে পেরেছি আর আমার বাবার যে ডিসিশন মেকিং ছিল এই সম্বন্ধে, সেই কারণেও এই ব্যাপারটা সম্ভব হল।
প্রধানমন্ত্রী জি: এই অঙ্গ কতজনের কাজে লাগলো?
অভিজিৎ জি: ওনার হার্ট দুটো কিডনি লিভার আর দুটো চোখ দান করা হয়েছিল, তাই চারজন জীবন পেয়েছিলেন এবং দু’জন চোখ পেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জি: অভিজিৎ জি আপনার বাবা ও মা দুজনেই প্রনম্য। আমি ওদের প্রণাম জানাই আর আপনার বাবা যিনি এত বড় সিদ্ধান্তে আপনার পরিবারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যা সত্যি অনেক প্রেরণাদায়ক। আর আমি মানি যে মা তো মাই হন। মা নিজেই এক প্রেরণার উৎস হন। কিন্তু মা যে পরম্পরা রেখে যান তা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। অঙ্গদানের জন্য আপনার মায়ের এই প্রেরণা আজ সমগ্র দেশের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আমি আপনাদের এই পবিত্র এবং মহান কাজের জন্য আপনার পুরো পরিবারকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অভিজিৎ জি ধন্যবাদ আর আপনার বাবাকে আমাদের প্রণাম অবশ্যই জানাবেন।
অভিজিৎ জি: নিশ্চয়ই, ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, ৩৯ দিনের অবাবত কৌর হোক বা ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী, এঁদের মতো দাতা আমাদের জীবনের মহত্ত্ব উপলব্ধি করিয়ে দিয়ে যান। আমাদের দেশে আজ বহু সংখ্যক এরকম অভাবগ্রস্ত মানুষ আছেন যাঁরা সুস্থ জীবনের আশায় কোনো অংদানকারী মানুষের অপেক্ষায় আছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে অঙ্গদানকে সহজ বানানোর জন্য এবং এই ব্যাপারে উৎসাহ দানের জন্য পুরো দেশে একই রকম পলিসির উপর কাজ করা হচ্ছে। সেই উপলক্ষে রাজ্যগুলোর domicile বিষয়ক শর্ত তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ চিকিৎসাধীন মানুষ এখন থেকে দেশের যেকোনো রাজ্যে গিয়ে organ পাওয়ার জন্যে নাম register করতে পারবেন। Organ donation-এর জন্য ৬৫ বছরের কম যে বয়সসীমা ছিল সরকার সেটাকেও তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ সত্ত্বেও আমার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- আরো বেশি করে যেন organ donor’রা এগিয়ে আসেন। আপনার একটা সিদ্ধান্ত বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে এবং জীবন গড়ে দিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন নবরাত্রির সময়, শক্তির উপাসনার সময়। আজ ভারতের যে সামর্থ্য নতুন করে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে তাতে আমাদের দেশের নারীশক্তির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি এমন অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এশিয়ার প্রথম মহিলা লোকো পাইলট সুরেখা যাদব’কে আপনারা social media-তে নিশ্চয়ই দেখেছেন। আরো একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করে সুরেখাজী ‘বন্দে ভারত express-এর’ও প্রথম মহিলা লোকো পাইলট হওয়ার নজির গড়েছেন। এ মাসেই producer গুনীত মোংগা এবং director কার্তিকী গঞ্জালভেস, তাঁদের Documentary ‘Elephant whisperers’ এর Oscar বিজয়ের মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। দেশের জন্য আরও বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন Bhabha Atomic Research Centre-এর Scientist জ্যোতির্ময়ী মোহন্তী জী। জ্যোতির্ময়ী জী, Chemistry এবং Chemical engineering-এর field এ IUPAC’র বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন। এই বছরের শুরুতেই ভারতের under-19 মহিলা ক্রিকেট টিম T-20 ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন। আপনারা যদি রাজনীতির দিকে দৃষ্টিপাত করেন, তাহলে নাগাল্যান্ডে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা লক্ষ্য করবেন। নাগাল্যান্ডে ৭৫ বছরে প্রথমবার দুজন মহিলা বিধায়ক ভোটে জিতে বিধানসভায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে নাগাল্যান্ড সরকার মন্ত্রিত্ব’ও দিয়েছে, অর্থাৎ সেই রাজ্যের রাজ্যবাসী প্রথমবার কোনো মহিলাকে মন্ত্রীরূপে পেলেন।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগে আমি সেই সকল নির্ভীক মেয়েদের সঙ্গেও দেখা করি টার্কিতে হওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর যাঁরা সেখানকার মানুষদের সাহায্য করতে সে দেশে গিয়েছিলেন। এঁরা সবাই NDRF-এর দলে ছিলেন। এঁদের সাহস ও কর্মদক্ষতার প্রশংসা হচ্ছে সারা বিশ্বে। ভারতবর্ষ UN mission-এর অন্তর্ভুক্ত শান্তিসেনাতে women-only platoonও নিযুক্ত করেছে। আজ মহিলারা দেশের সৈন্যদলের তিনটি বিভাগেই নিজেদের শৌর্যের পতাকা গর্বের সঙ্গে মেলে ধরছেন। Group Captain শলিজা ধামী বায়ুসেনার combat unit-এর command appointment পাওয়া প্রথম মহিলা আধিকারিক। তাঁর প্রায় ৩ হাজার ঘন্টার flying experience রয়েছে। একই ভাবে, ভারতীয় সেনার সাহসিনী ক্যাপ্টেন শিবা চৌহান সিয়াচেনে কাজ করা প্রথম মহিলা আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সিয়াচেনে, যেখানে পারদ -৬০ ডিগ্রী অব্দি নেমে যায়, সেখানে তিনি তিন মাস নিযুক্ত থাকবেন।
বন্ধুরা, এই তালিকা এতটাই লম্বা যে এখানে সবার কথা বলা মুশকিল। এভাবেই সব মেয়ে, আমাদের মেয়েরা, ভারত ও ভারতের স্বপ্নগুলিকে শক্তি জোগাচ্ছে। নারীশক্তির এই ক্ষমতাই উন্নত ভারতের প্রাণবায়ু। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল পুনর্ণবীকরণ শক্তি বা renewable energyর খুব চর্চা হচ্ছে সারা বিশ্বে। আমি যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদের সঙ্গে দেখা করি তখন এই ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে তাঁরা কথা বলবেনই। বিশেষ করে solar energy ক্ষেত্রে যে গতিতে ভারত এগোচ্ছে তা স্বতন্ত্র রুপে একটা বিশাল সাফল্য।
ভারতীয়রা বহু যুগ আগে থেকেই সূর্যের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে সূর্যের শক্তি নিয়ে যে ধরণের বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস রয়েছে, সূর্যের উপাসনা করা নিয়ে যে রকম আচার-ব্যবহার রয়েছে, তা অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়। আমি ভীষণ খুশি যে আজকাল প্রতিটি দেশবাসী সৌর শক্তির মাহাত্ম্য বুঝছেন এবং clean energy-র ক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করতে চাইছেন। ‘সবার চেষ্টায় এই spirit আজ ভারতের solar mission-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পুনেতে এরকমই একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা আমার মনযোগ আকর্ষণ করেছে। তার দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ওখানকার MSR-Olive Housing Society সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নিজেদের সোসাইটিতে পানীয় জল, লিফট ও লাইটের মতন সাধারণ পরিষেবা এখন সোলার এনার্জি দিয়ে চলবে। এরপর এই সোসাইটিতে সবাই মিলে অনেকগুলি সোলার প্যানেল লাগান। আর আজ এই সোলার প্যানেলগুলি থেকে বছরে প্রায় ৯০ হাজার কিলোওয়াট hour বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এর ফলে মাসে প্রায় ৪০,০০০ টাকার সাশ্রয় হচ্ছে। এই সঞ্চয়ের লাভ সোসাইটির সমস্ত মানুষ পাচ্ছেন।
বন্ধুরা, ঠিক পুনের মতনই Daman – Diu এর মধ্যে Diu বলে জায়গাটি একটি আলাদা জেলা। এবং এখানকার মানুষেরা একটি আশ্চর্যজনক কাজ করে দেখিয়েছেন। আপনারা জানেন যে Diu সোমনাথ এর কাছে। এটি ভারতবর্ষের প্রথম এমন জেলা হয়ে উঠেছে, যেটি দিনের বেলায় তার সমস্ত প্রয়োজনের জন্য একশো শতাংশ clean energy ব্যবহার করছে।
দিউ-এর এই সফলতার মন্ত্র হল সকলের আন্তরিক প্রয়াস। এক সময় এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্পদের অভাব ছিল। স্থানীয় মানুষেরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য সোলার এনার্জিকে মনোনীত করে নিয়েছে। এখানে অনুর্বর জমি ও কিছু বিল্ডিং-এ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই প্যানেলগুলি থেকে দিউয়ে, দিনের বেলায়, যতটা বিদ্যুতের প্রয়োজন তার থেকেও বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। এই সোলার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে, বিদ্যুৎ কেনার জন্য, প্রায় ৫২ কোটি টাকার খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক সুরক্ষা হয়েছে। বন্ধুরা, পুনে ও Diu যা সফল করে দেখিয়েছে, সারাদেশে আরও অনেক জায়গায় এমন ধরনেরই প্রচেষ্টা চলছে। এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আমরা ভারতীয়রা পরিবেশ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কতটা সংবেদনশীল এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা সতর্ক। আমি এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে, সময়ের সঙ্গে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী, অনেক ঐতিহ্য গড়ে ওঠে। এই ঐতিহ্যগুলি আমাদের সংস্কৃতির সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং এটিকে একটি নতুন মর্যাদা দেয়। কয়েক মাস আগে কাশীতে এমনই এক প্রথা শুরু হয়েছিল। কাশী-তামিল সঙ্গমমের সময়, কাশী এবং তামিল অঞ্চলের মধ্যে, শত বছরের চেয়ে প্রাচীন, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উদযাপিত হয়েছিল। ‘এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর চেতনা আমাদের দেশকে শক্তি যোগায় । যখন আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানি এবং শিখি, তখন এই একত্বের অনুভূতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে!
ইউনিটির এমন স্পিরিট এর সঙ্গেই আগামী মাসে গুজরাটের বিভিন্ন অংশে “সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম” আয়োজিত হতে চলেছে। “সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম” ১৭ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। মন কি বাতের কিছু শ্রোতা নিশ্চয়ই ভাবছেন গুজরাটের সৌরাষ্ট্রের তামিলনাড়ুর সঙ্গে কী সম্বন্ধ? আসলে অনেক যুগ আগে সৌরাষ্ট্রের বহু মানুষ তামিলনাড়ুর আলাদা আলাদা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা আজও সৌরাষ্ট্রী তামিল নামে পরিচিত। তাদের খাওয়া দাওয়া, রীতিনীতি, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে আজও সৌরাষ্ট্রের কিছু কিছু ঝলক পাওয়া যায়। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে তামিলনাড়ুর বহু মানুষ আমাকে প্রশংসাসূচক চিঠি পাঠিয়েছেন। মাদুরাইয়ের বাসিন্দা, জয়চন্দ্রনজী একটি অত্যন্ত সুচিন্তিত কথা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, হাজার বছরের পর প্রথমবার কেউ সৌরাষ্ট্র-তামিলের এই সম্পর্কের বিষয়ে ভেবেছেন। সৌরাষ্ট্র থেকে তামিলনাড়ুতে আগত ও বসবাসরত মানুষদের কথা জানতে চেয়েছেন। জয়চন্দ্রনজীর কথা হাজার হাজার তামিল ভাইবোনের মনের কথা।
বন্ধুরা, মন কি বাত এর শ্রোতাদের আমি অসমের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি খবর জানতে চাই। এটিও “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত”-এর ভাবনাকে শক্তিশালী করে। আপনারা সবাই জানেন আমরা বীর লাসিত বরফুকনজির ৪০০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি। বীর লাসিত বরফুকন অত্যাচারী মুঘল সাম্রাজ্যের কবল থেকে গুয়াহাটিকে মুক্ত করেছিলেন। আজ দেশ এই মহান যোদ্ধার অদম্য সাহসের কথা জানছে। কিছুদিন আগে লাসিত বরফুকন-এর জীবনের ওপর আধারিত নিবন্ধ লেখার একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে তার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ নিবন্ধ পাঠিয়েছিলেন। আপনারা এ কথা জেনেও অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যে এটি এখন একটি গিনেস রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা এবং সবচেয়ে খুশির কথা, বীর লাসিত বরফুকন এর ওপর প্রায় ২৩টি পৃথক পৃথক ভাষায় আপনারা নিবন্ধ লিখে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে অসমীয়া ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, বোড়ো, নেপালি, সংস্কৃত, সাঁওতালির মতো ভাষায় মানুষ তাঁদের লেখা পাঠিয়েছেন। আমি এই প্রয়াসের অংশীদার সকলকে আন্তরিক প্রশংসা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কাশ্মীর বা শ্রীনগরের কথা হয়, তখন সবার প্রথমে আমাদের সামনে এর উপত্যকা এবং ডাল লেকের ছবি ফুটে ওঠে। আমরা সবাই ডাল লেকের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে চাই। কিন্তু ডাল লেকের আরও একটি বিশেষ ব্যাপার রয়েছে। এই লেক তার অত্যন্ত স্বাদু লোটাস স্টেম অর্থাৎ পদ্মফুলের ডাঁটির জন্য প্রসিদ্ধ। পদ্মের ডাটি দেশের আলাদা আলাদা জায়গায় আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। কাশ্মীরে একে নাদরু বলে। কাশ্মীরের নাদরুর চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই চাহিদা দেখে ডাল লেকে নাদরু ফলনকারী কৃষকরা একটি FPO তৈরি করেছেন। এই FPO তে প্রায় ২৫০ জন কৃষক শামিল হয়েছেন। আজ এই কৃষকরা নিজেদের নাদরু বিদেশে পর্যন্ত পাঠাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই এই কৃষকরা দুটি খেপে UAE-তেও নাদরু পাঠিয়েছেন। এই সাফল্য কাশ্মীরের নাম তো উজ্জ্বল করছেই, পাশাপাশি এতে শত শত কৃষকের উপার্জনও বাড়ছে।
বন্ধুরা, কৃষি সম্পর্কিত কাশ্মীরের মানুষের এমনই একটি প্রচেষ্টা আজকাল তাঁদের সাফল্যের সুরভি ছড়াচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আমি কেন সাফল্যের সুরভির কথা বলছি- এটা সুগন্ধের বিষয়, সুরভির বিষয়! আসলে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় একটি জনপদ আছে ‘ভদরওয়াহ’! এখানকার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ভুট্টা চাষ করে আসছেন, তবে কিছু কৃষক অন্যরকম কিছু করার প্রয়াস করেছেন। তাঁরা floriculture শুরু করেন, অর্থাৎ ফুলের চাষ। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ কৃষক এখানে ল্যাভেন্ডার চাষ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের aroma mission-এর সহায়তাও পেয়েছেন তাঁরা। এই নতুন চাষ কৃষকদের আয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আজ ল্যাভেন্ডারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাফল্যের সুরভিও ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূর।
বন্ধুরা, যখন কাশ্মীরের কথা হচ্ছে, পদ্মের কথা হচ্ছে, ফুলের কথা হচ্ছে , সুরভির কথা হচ্ছে, তখন পদ্মফুলে বিরাজমান মা শারদার কথা স্মরণে আসবে, খুবই স্বাভাবিক। কয়েকদিন আগে কুপওয়ারায় মা শারদার বিশাল মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে। যে পথ দিয়ে একসময় শারদা পীঠ দর্শনের জন্য যেতেন, সেই পথেই এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মন্দির নির্মাণে স্থানীয় মানুষ অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে এই শুভ কাজের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার ‘মন কি বাত’-এ এতটুকুই। ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্বে (১০০তম) পর্বে পরের বার দেখা হবে। আপনারা সবাই, আপনাদের পরামর্শ পাঠান। এই মার্চ মাসে, আমরা হোলি থেকে নবরাত্রি পর্যন্ত অনেক উৎসব এবং পুজো-পার্বণে ব্যস্ত ছিলাম। পবিত্র রমজান মাসও শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শ্রী রাম নবমীর মহা উৎসবও আসতে চলেছে। এর পর মহাবীর জয়ন্তী, Good Friday এবং Easter-ও আসবে। এপ্রিল মাসে, আমরা ভারতের দুই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করি। এই দুই মহাপুরুষ হলেন – মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। এই দুই মহাপুরুষই সমাজের বৈষম্য দূর করতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছিলেন। আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের এমন মহান ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখার এবং নিরন্তর অনুপ্রেরণা নেওয়া দরকার। আমাদের কর্তব্যকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। বন্ধুরা, এই সময়ে কিছু জায়গায় করোনাও বাড়ছে। সেজন্য আপনাদের সবাইকে আরও সাবধান হতে হবে, স্বচ্ছতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী মাসে, ‘মন কি বাত’-এর শততম (১০০তম) পর্বে, আমরা আবার মিলিত হব, ততদিনের জন্য আমাকে বিদায় দিন। ধন্যবাদ । নমস্কার। |
mkb-2 | 141bc6bfa6248dfaf74c1ff5ae6833d4b86f76918968a5780e9089e657950f81 | ben | নমস্কার!
‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার একবার আপনাদের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, নৌসেনার ছয়জন মহিলা কম্যাণ্ডারের একটি দল গত কয়েক মাস ধরে সমুদ্রসফর করছিল। যার নাম ‘নাবিকা সাগর পরিক্রমা’। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। ভারতের এই ছয় কন্যার দল ২৫০ দিনেরও বেশি ‘আই-এন-এস-ভি তারিনী’র মাধ্যমে পুরো বিশ্ব ঘুরে গত ২১-শে মে ভারতে ফিরে এসেছে এবং সারা দেশ তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বিভিন্ন মহাসাগর এবং কয়েকটি সমুদ্রযাত্রা করে প্রায় ২২,০০০ নটিক্যাল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এটি সারা বিশ্বেই একটি নজীর বিহীন ঘটনা। গত বুধবার, এই কন্যাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার, তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি আরেকবার এই কন্যাদের দুঃসাহসিক কাজের জন্য, নৌসেনার খ্যাতি বাড়ানোর জন্য, ভারতের সম্মান বৃদ্ধির জন্য এবং বিশেষ করে ভারতের কন্যারা কোনও অংশেই কম নয় — বিশ্বের দরবারে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ‘সেন্স অফ অ্যাডভেঞ্চার’-এর কথা কে না জানে। যদি আমরা মানবজাতির প্রগতির দিকে দেখি, তবে দেখব, কোনও না কোনও দুঃসাহসিক কাজের মধ্যেই প্রগতির উদ্ভাবন ঘটেছে। আসলে প্রগতি দুঃসাহসিক কাজের মধ্যেই জন্ম নেয়। প্রথার বাইরে গিয়ে কিছু অসাধারণ কাজ করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছে — এই ভাবনার মানুষ হয়ত কম, কিন্তু যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি মানুষকে তা অনুপ্রাণিত করে এসেছে। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, গত কয়েকদিনে মাউণ্ট এভারেস্ট-জয়ী মানুষদের সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। শতাব্দী ধরে মাউণ্ট এভারেস্ট মানবজাতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এবং সাহসী মানুষ সেই চ্যালেঞ্জ স্বীকারও করেছে।
১৬-ই মে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরের একটি আশ্রম-বিদ্যালয়ের পাঁচজন আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী — মনীষা ধুরবে, প্রমেশ আলে, উমাকান্ত মঢবি, কবিদাস কাতমোড়ে এবং বিকাশ সোয়াম — এরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাস থেকে ওয়ার্ধা, হায়দ্রাবাদ, দার্জিলিং এবং লে-লাদাখে এদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ‘মিশন শৌর্য’-য় এদের নির্বাচন করা হয়েছিল। এবং নামের সার্থকতা রেখে এভারেস্ট জয় করে এরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। আমি চন্দ্রপুর স্কুলের এই ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সম্প্রতি ষোলো বছরের শিবাঙ্গী পাঠক সবচেয়ে কনিষ্ঠ ভারতীয় মহিলা হিসেবে নেপালের দিক থেকে এভারেস্ট জয় করেছে। কন্যা শিবাঙ্গীকে অনেক অনেক অভিনন্দন!
অজিত বাজাজ এবং তাঁর কন্যা দিয়া এভারেস্ট জয়ী প্রথম পিতা-পুত্রীর জুটি। শুধু যুবপ্রজন্মই এভারেস্ট জয় করছেন তা নয়, গত ১৯-শে মে পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রীমতী সঙ্গীতা বেহল-ও এভারেস্ট জয় করেছেন।
এভারেস্ট আরোহীদের মধ্যে কয়েকজন এমনও আছেন যাঁরা শুধু দক্ষই নন, অনুভূতিপ্রবণও। কিছুদিন আগে ‘স্বচ্ছ গঙ্গা অভিযান’-এর অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমে BSF-এর একটি দল এভারেস্ট-এ আরোহন করে। সেই দলটি এভারেস্ট থেকে যথাসম্ভব নোংরা আবর্জনা নীচে নামিয়ে আনে। এই কাজ প্রশংসনীয় তো বটেই, পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার প্রতি, পরিবেশের প্রতি এঁদের দায়িত্ববোধেরও পরিচায়ক। বহু বছর ধরেই লোকে এভারেস্টে আরোহণ করছেন। বহু লোক এই পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছতে সফলও হয়েছেন। আমি সেই সমস্ত সাহসী বীরদের, বিশেষত কন্যাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষত আমার নওজওয়ান বন্ধুরা! দুই মাস আগে আমি যখন ‘Fit India’-র কথা বলেছিলাম, তখন আমি ভাবিনি যে এই বিষয়ে এত ভাল সাড়া পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এত সংখ্যক মানুষ এই বিষয়কে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে আসবেন। ‘Fit India’-র প্রসঙ্গে আমি বলব আমার বিশ্বাস, আমরা যত খেলবো, ততই দেশ খেলবে। Social Media-তে লোকে তাঁদের Fitness Challenge–এর ভিডিও শেয়ার করছেন, সেখানে অন্যদের ট্যাগ করে তাদেরও চ্যালেঞ্জ করছেন। Fit India-র এই অভিযানে আজ সকলে অংশগ্রহণ করছেন। সিনেমা জগতের লোক হোক, ক্রীড়াজগতের মানুষজন হোক বা দেশের আমজনতা, সেনা জওয়ান হন বা স্কুল শিক্ষক, চতুর্দিক থেকে একটাই সম্মিলিত ধ্বনি শোনা যাচ্ছে— “আমরা fit তো India fit”। আমার কাছে আনন্দের বিষয় যে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি আমায় চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং আমিও সেই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছি। আমার বিশ্বাস, এটি খুবই ভালো প্রক্রিয়া এবং এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আমাদের নিজেদের fit থাকতে ও অন্যদের fit রাখতে উৎসাহিত করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এ একাধিক বার আপনারা আমার কাছ থেকে খেলার বিষয়ে, ক্রীড়াবিদ্দের বিষয়ে কিছু না কিছু শুনেছেন। গতবার কমনওয়েলথ-এর নায়ক তার মতামত, তাঁর মনের কথা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের জানান—
“নমস্কার স্যার! আমি ছবি যাদব, নয়ডা থেকে বলছি। আমি আপনার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা এবং আজ আপনার সঙ্গে আমার ‘মন কি বাত’ বলতে চাই। এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি আরম্ভ হয়ে গেছে। আমি একজন মা এবং আমি লক্ষ্য করেছি যে এখনকার বাচ্চারা অধিকাংশ সময়েই ইন্টারনেটে গেম খেলতে ব্যস্ত। আমরা যখন ছোটো ছিলাম, তখন ট্র্যাডিশনাল গেমস যা অধিকাংশই আউটডোর গেমস — সেইগুলি খেলতাম। যেমন একটি খেলা ছিল যেখানে সাতটি পাথরের টুকরো একের উপর এক রেখে সেটাকে বল দিয়ে মারতে হত। আর যেমন উঁচু-নীচু খেলা, খো-খো — এইসব খেলাগুলি আজকাল যেন হারিয়ে গেছে। আমার বিনীত অনুরোধ আপনি আজকালকার প্রজন্মকে কিছু ট্র্যাডিশনাল গেমস-এর ব্যাপারে জানান, যাতে তাদের সেইদিকে ঝোঁকটা বাড়ে, ধন্যবাদ!”
ছবি যাদবজী, আপনার ফোনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! এটা একদম সঠিক কথা যে, যেসমস্ত খেলা একসময় অলিগলিতে দেখা যেত, সব বাচ্চার জীবনের অঙ্গ ছিল। সেগুলি আজ কমে যাচ্ছে। এই খেলাগুলি গরমের ছুটির বিশেষ অঙ্গ ছিল। কখনও ভরদুপুরে, তো কখনও রাতে খাওয়ার পর একদম নিশ্চিন্তে বাচ্চারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলত। কিছু খেলা তো এমনও ছিল যা গোটা পরিবার একসঙ্গে খেলত — যেমন পিট্ঠু, গুলি খেলা, খো-খো, লাট্টু বা ডাঙ্গুলি — এমন অগণিত খেলা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কামরূপ পর্যন্ত সবার শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। হ্যাঁ এটা অবশ্যই, আলাদা আলাদা জায়গায় খেলাগুলির আলাদা আলাদা নাম। পিট্ঠু খেলাটিই বিভিন্ন নামে লোকে জানে যেমন লাগোরী, সাতোলিয়া, সাত পাত্থর, ডিকোরী, সতোদিয়া এবং আরও না জানি কত অন্য নাম এই একই খেলার। পরম্পরাগত খেলাগুলির মধ্যে দুটি ধরন আছে। আউটডোরও আছে আবার ইন্ডোরও আছে। আমাদের দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য কোথাও হয়ত এই খেলাগুলির মধ্যেও দেখা যায়। একই খেলা নানা জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমি গুজরাটের, আমি জানি গুজরাটের একটা খেলা আছে যাকে ‘চোমল্ ইস্তো’ বলা হয়। এটি কড়ি বা তেঁতুল বিচি অথবা গুটি দিয়ে ৮ বাই ৮-এর স্কোয়্যার বোর্ড-এ খেলা হয়। এবং ঐটি প্রায় সব রাজ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। কর্ণাটকে একে চোকাবারা বলে। মধ্যপ্রদেশে এর নাম অত্তু। কেরলে পাকিড়াকালী আবার মহারাষ্ট্রতে চম্পল, তামিলনাড়ুতে দায়াম ও থায়াম আর রাজস্থানে চঙ্গাপো — এরকম না জানি আরও কত নাম। বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা একে অপরের ভাষা না জানলেও খেলার সময় তারা ঠিক দেখে — আরে! ঐটি তাদের অজানা নয়! আমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন যিনি ছোটবেলায় ডাঙ্গুলি খেলেননি! ঐটি তো গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গায় দেখা যায় এমন খেলা। ঐটিও কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন নামে পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশে এটি গোটিবিল্লা অথবা কর্যাবিল্লা নামে পরিচিত। ওড়িশাতে একে গুলিবাড়ি বলে, মহারাষ্ট্রে একে বলে বিত্তিডালু। কিছু খেলার অবশ্য মরশুম থাকে। যেমন ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য একটি বিশেষ মরশুম থাকে। যখন সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াই, যখন আমরা খেলাধূলা করি, নিজেদের বৈশিষ্ট্যগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতে পারি। আপনারা দেখে থাকবেন অনেক বাচ্চা খুব লাজুক গোছের হয় কিন্তু খেলাধূলা করার সময় খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে, নিজেকে প্রকাশ করে। বড়রা যারা স্বভাবত গম্ভীর থাকেন, খেলাধূলার সময় তাঁদের ভেতরে থাকা বাচ্চাটি বেড়িয়ে আসে। পারম্পরিক খেলাগুলি তৈরিই এমনভাবে যা শারীরিক ক্ষমতার পাশাপাশি আমাদের লজিক্যাল থিংকিং, একাগ্রতা, সজাগ থাকতে, স্ফূর্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। আর এগুলি শুধু খেলা নয়, এগুলি আমাদের জীবনের মূল্যবোধ শেখায়, শেখায় লক্ষ্য স্থির করতে, দৃঢ়তা অর্জন করতে, টিম স্পিরিট তৈরি করতে, পরস্পরকে সাহায্য করতে। কিছুদিন আগে আমি দেখছিলাম, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলিতে সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ও interpersonal skill উন্নত করার জন্য আমাদের পরম্পরাগত খেলাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলি ফলপ্রসূ হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের এই খেলাগুলির তো কোনও বয়সসীমা নেই। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে দাদু-দিদা, সবাই মিলে একসঙ্গে খেলতে পারে আর তখন এই জেনারেশন গ্যাপ ছু-মন্তর হয়ে যায়। একই সঙ্গে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হই।
কিছু খেলা আমাদের সমাজ, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে। কখনও কখনও মনে হয় যে আমাদের এই খেলাগুলি যেন হারিয়ে না যায়, খেলাগুলি যদি হারিয়ে যায় তাহলে হয়ত শৈশবও হারিয়ে যাবে।
‘ইয়ে দৌলত ভি লে লো
ইয়ে শহরত্ ভি লে লো
ভালে ছিন্ লো মুঝসে মেরি জওয়ানী
মগর মুঝকো লৌটা দো বচপন কা শাওন
ও কাগজ কি কশ্টি, ও বারিষ কা পানি…।
অর্থাৎ, আমার ধনদৌলত নিয়ে নাও, যশ-খ্যাতি নিয়ে নাও, আমার যৌবন নিয়ে নাও কিন্তু আমার শৈশব ফিরিয়ে দাও — এই গান আমরা শুনে থাকি, আর এই জন্যই এই ঐতিহ্যপূর্ণ খেলা, একে হারিয়ে ফেলা যাবে না। এখন স্কুল, পাড়া, যুবসম্প্রদায়য়ের উচিত এগিয়ে এসে এই খেলাগুলিকে উৎসাহিত করা। ‘Crowd Sourcing’-এর দ্বারা আমরা আমাদের ঐতিহ্যশালী খেলাগুলির এক সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারি। এই খেলার ভিডিও বানানো যেতে পারে, যাতে খেলার নিয়ম, কীভাবে খেলবে এই বিষয়ে দেখান যেতে পারে। অ্যানিমেশন ফিল্ম-ও বানানো যেতে পারে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এই খেলাগুলি সম্পর্কে জানতে পারে, খেলতে পারে আর বড় হয়ে উঠতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী! আগামী ৫-ই জুন আমাদের দেশ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদ্যাপন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে। এটা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সারা বিশ্ব ভারতের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবারের থিম — ‘Beat Plastic Pollution’। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই ভাবনার গুরুত্ব বুঝে আমরা সবাই এটা সুনিশ্চিত করি যে আমরা পলিথিন, লো গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যবহার করব না আর ‘প্লাস্টিক পলিউশান’-এর যে ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের প্রকৃতি, বন্য জীবন ও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে, তাকে কম করার চেষ্টা করব। World Environment Day-এর ওয়েবসাইট wedindia2018 থেকে সব তথ্য দেখে নিয়ে নিজের রোজকার জীবনে তার প্রয়োগের চেষ্টা করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। যখন প্রচণ্ড গরম পরে বা বন্যা হয়, বৃষ্টি থামতেই চায় না, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়লে সবাই বিশেষজ্ঞর মতো ‘Global Warming’, ‘Climate Change’ -এসবের কথা বলতে থাকে। কিন্তু শুধু কথা বললেই হবে? প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা, প্রকৃতিকে রক্ষা করা — এ আমাদের অভ্যাস এবং সংস্কার হওয়া উচিত। বিগত কয়েক সপ্তাহে আমরা সবাই দেখেছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধুলোর ঝড় চলেছে। সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি যা কিনা সময়োচিত নয়। প্রাণহানি ঘটেছে, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সবই মূলতঃ Weather Pattern-এ যে পরিবর্তন হয়েছে, তার পরিনাম। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে আমাদের শিক্ষা দেয়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে মিলেমিশে থাকতে হবে। মহাত্মা গান্ধী তাঁর সারা জীবন ধরে এই কথাই বলে এসেছেন।
ভারত আজ Climate Justice-এর কথা বলছে, COP 21 এবং Paris চুক্তিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, আমরাInternational Solar Alliance–এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে একজোট করেছি, এই সবের পিছনে মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন পূর্ণ করার এক শুভ চিন্তা কাজ করছে।
এই ‘পরিবেশ দিবস’-এ আমরা একটু ভাবি, এই পৃথিবীকে আরও পরিষ্কার, আরও সবুজ বানানোর জন্য আমরা কী করতে পারি। এই পথে কীভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারি, কী কী innovation করতে পারি! বর্ষা আসছে। এখন আমরা রেকর্ড সংখ্যক বৃক্ষ রোপণ করতে পারি। শুধু রোপণ করাই নয়, গাছ বড় হওয়া অবধি তার দেখাশোনা করাটাও জরুরী।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষ করে আমার যুবা বন্ধুরা! আপনারা এখন ২১-শে জুনকে সবাই মনে রাখেন। শুধু আপনি-আমি নই, সারা পৃথিবী এখন ২১-শে জুনকে মনে রাখে। সারা বিশ্বে এখন ২১-শে জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে কয়েক মাস আগে থেকেই এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে সারা বিশ্বে ২১-শে জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।Yoga for Unity এবং Harmonious Society এমন এক বার্তা যা সারা বিশ্ব বিগত কয়েক বছর ধরে বারবার অনুভব করেছে। সংস্কৃতের মহান কবি ‘ভর্তুহরি’ কয়েক শতাব্দী আগে শতকত্রয়ম্–এ লিখেছিলেন—
ধ্যারয়ম্ ইয়স্যয় পিতা শমা চ জননী
শান্তিস্ চিরম্ গেহিনী
সত্যম্ সুনুরয়াম্ দয়া চ ভগিনী ভ্রাতা মনহঃ সইয়ামহ
শয্যা ভূমিতলম্ দিশোপি বসনাম্ জ্ঞানামৃতম্ ভোজনম্
এতে ইয়স্যয় কুটুম্বিনহ্ বদ সখে কস্মাদ্ ভয়ম্ যোগীনহ্।।
শত শত বছর আগে বলা এই কথার অর্থ হল এই যে — নিয়মিত যোগাভ্যাস করার ফলে কিছু সদ্গুণ বন্ধু ও স্বজনের মতো হয়ে ওঠে। যোগাভ্যাসে সাহস বাড়ে যা সবসময় পিতার মত আমাদের রক্ষা করে। ক্ষমার মানসিকতা তৈরি হয় যেমন মা তাঁর নিজের সন্তানের জন্য অনুভব করে। মানসিক শান্তি আমাদের চিরস্থায়ী বন্ধু হয়ে ওঠে। ভর্তুহরি বলেছিলেন, নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে সত্য আমাদের সন্তান, দয়া আমাদের ভগ্নী, আত্মসংযম আমাদের ভ্রাতা, পৃথিবী আমাদের শয্যা আর জ্ঞান আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার কাজ করে। যখন এত গুণের অধিকারী কেউ হন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই যোগী সব ধরনের ভয়কে জয় করে। আরও একবার আমি সব দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন ‘যোগ’-এর বিরাট ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং এক সুস্থ, সুখী এবং সদ্ভাবনাপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তোলেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৭-শে মে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর তিরোধান দিবস। আমি পণ্ডিতজীকে প্রণাম জানাচ্ছি। এই মে মাস আরও এক মহান মানবের জন্য স্মরণীয়। তিনি হলেন বীর সাভারকর। ১৮৫৭-র মে মাসে ভারতবাসী ইংরেজকে নিজের শক্তির পরিচয় দিয়েছিল। দেশের অনেক অংশে আমাদের জওয়ান ও কৃষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। দুঃখের কথা এই যে, আমরা অনেক দিন ধরে ১৮৫৭-র ঘটনাকে কেবলমাত্র বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ বলে এসেছি। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাকে শুধু ছোট করেই দেখান হয়নি, আমাদের আত্মসম্মানকে আঘাত করার এক চেষ্টা ছিল। এই বীর সাভারকর-ই নির্ভীক হয়ে লিখলেন যে ১৮৫৭ সালে যা কিছু হয়েছিল তা কোনওবিদ্রোহ নয় বরং স্বাধীনতার প্রথম লড়াই। সাভারকরের সঙ্গে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউজের বীরেরা এর পঞ্চাশতম জয়ন্তীসমারোহ সহকারে পালন করল। এটাও এক অদ্ভূত সংযোগ, যে মাসে স্বাধীনতার প্রথম স্বতন্ত্র সংগ্রাম শুরু হল, সেই মাসেই বীর সাভারকরের জন্ম হয়। সাভারকর-জীর ব্যক্তিত্ব নানা বিশেষত্বে পূর্ণ ছিল; শস্ত্র আর শাস্ত্র, দুটোরই উপাসক ছিলেন তিনি। মূলত বাহাদুরি আর ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্ঘর্ষের জন্য পরিচিত বীর সাভারকর। কিন্তু এসব ছাড়াও তিনি এক ওজস্বী কবি আর সমাজ সংস্কারকও ছিলেন যিনি সর্বদা সদ্ভাবনা আর একতার উপর জোর দিয়েছেন। সাভারকর-জীর ব্যাপারে এক অদ্ভূত বর্ণনা দিয়েছেন আমাদের প্রিয়, আদরণীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী-জী। অটলজী বলেছিলেন, সাভারকর মানে শক্তি, সাভারকর মানে ত্যাগ, সাভারকর মানে তপস্যা, সাভারকর মানে নীতি-নিষ্ঠা, সাভারকর মানে তর্ক, সাভারকর মানে তারুণ্য, সাভারকর মানে তীর, সাভারকর মানে তলোয়ার। কতটা সঠিক ছবি তুলে ধরেছিলেন অটলজী। সাভারকর কবিতা আর বিপ্লব, দুটোকেই সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। সংবেদনশীল কবি হওয়ার পাশাপাশি উনি সাহসী বিপ্লবীও ছিলেন।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আমি টিভিতে একটা কাহিনি দেখছিলাম। রাজস্থানের সীকরের বস্তিতে থাকা আমাদের গরীব মেয়েদের কাহিনি। আমাদের এই কন্যারা, যারা কোনো এক সময় আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটা থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করতে বাধ্য হত – আজ তারা সেলাইয়ের কাজ শিখে গরীবদের আচ্ছাদন সেলাই করছে। এখানকারকন্যারা আজ নিজের এবং নিজের পরিবারের কাপড়চোপড় ছাড়াও সাধারণ থেকে উন্নত বস্ত্র সেলাই করছে। তারা এর সঙ্গে কৌশল বিকাশের কোর্সও করছে। আমাদের এই কন্যারা আজ আত্মনির্ভর হয়েছে। সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপন করছে আর নিজের-নিজের পরিবারের জন্য এক শক্তি হয়ে উঠেছে। আশা আর বিশ্বাসে ভরপুর আমাদের এই কন্যাদের আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভকামনা জানাই। এঁরা দেখিয়েছেন যে যদি কিছু করে দেখানোর জেদ থাকে আর তার জন্য আপনি কৃতসঙ্কল্প হন তো যাবতীয় মুশকিলের মধ্যেও সাফল্য লাভ করা যায় আর এটা শুধু সীকরের কথা নয়, হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণে আপনি এটা দেখতে পাবেন। আপনার আশেপাশে, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে খেয়াল করলে নজরে পড়বে যে কীভাবে লোকেরানানা সমস্যাকে পরাজিত করছে। আপনি অনুভব করেছেন যে যখনই আমরা কোনও চায়ের দোকানে যাই, সেখানকার চা খেয়ে তৃপ্তি পাই তখন কিছু মানুষের সঙ্গে আলোচনা আর
বিচার-বিশ্লেষণও হয়। এই আলোচনা রাজনৈতিকও হয়, সামাজিকও হয়, চলচ্চিত্র সম্পর্কেও হয়, খেলা আর খেলোয়াড়দের সম্পর্কেও হয়, দেশের সমস্যা নিয়েও হয় – যে, সমস্যাটা এমন – এর সমাধান এমনভাবে হবে – এমনটা করা উচিৎ। কিন্তু অধিকাংশ সময় এই চর্চা কেবল আলোচনাতেই সীমিত থাকে। কিন্তু কিছু লোক এমন হন যাঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে, নিজেদের পরিশ্রম আর উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবর্তনের অভিমুখে এগিয়ে যান, সেটাকে বাস্তবে রূপ দেন। অন্যের স্বপ্নকে আপন করে নেওয়ারএবং সেটাকে সম্পূর্ণ করতে নিজেকে সঁপে দেওয়ার এমনই এক কাহিনিওড়িশার কটক শহরের ঝুপড়িতে বাস করা ডি প্রকাশ রাওয়ের। গতকালই ডি প্রকাশ রাওয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হল আমার। শ্রীমান ডি প্রকাশ রাও গত পাঁচ দশক ধরে শহরে চা বিক্রি করছেন। আপনারা জেনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন, এক মামুলি চা-বিক্রেতা সত্তরেরও বেশি বাচ্চার জীবনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। উনি ঝুপড়ি আর বস্তিতে থাকা বাচ্চাদের জন্য ‘আশা আশ্বাসন’ নামে এক স্কুল খুলেছেন। সেই গরীব চা-ওয়ালা এখানেই তার আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ খরচ করেন। তিনি স্কুলে আসা সব বাচ্চার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর ভোজনের যাবতীয় আয়োজন করেন। আমি ডি প্রকাশ রাওয়ের কঠিন পরিশ্রম, ওঁর উদ্যোগ আর সেইসব গরীব বাচ্চাদের জীবনকে এক নতুন দিশা দেখানোর জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। উনি ওদের জীবনের অন্ধকারকে মুছে দিয়েছেন। ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ’ এই বেদবাক্য কে না জানে, কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন ডি প্রকাশ রাও। ওঁর জীবন আমাদের সবার জন্য, সমাজ আর গোটা দেশের জন্য এক অনুপ্রেরণা। অনুপ্রেরণা দেওয়া এমন অনেকঘটনাবলী আপনারও আশেপাশে থাকবে। অসংখ্য ঘটনা হয়ত আছে। আসুন আমরা সদর্থক মানসিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
জুন মাসে এত গরম হয় যে লোক বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে আর এই আশায় আকাশের মেঘের দিকে চাতকের মত চেয়ে থাকে। আজ থেকে কিছু সময় পরে লোক চাঁদেরও প্রতীক্ষা করবে। চাঁদ দেখতে পাওয়ার অর্থ হল ঈদ পালিত হওয়া।রমজানের সময় এক মাসের উপবাস শেষে ঈদের পর্ব জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব শুরুর প্রতীক। আমার বিশ্বাস সবাইখুবউৎসাহের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। এই উপলক্ষে বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো ঈদি লাভ হবে। আশা করছি যে ঈদের উৎসব আমাদের সমাজে সদ্ভাবের বন্ধনকে আরও মজবুত করবে। সবাইকে অনেক-অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী। আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক ধন্যবাদ। সামনের মাসে আবার একবার ‘মন কি বাত’এ মিলিত হব।ধন্যবাদ!
CG/SC |
mkb-3 | c142710a65bc2786590caf2930e5a1bd3c062e7b49f27493cf7eba2301dd1310 | ben | নতুনদিল্লি, ২৯শে নভেম্বর, ২০২০
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ ‘মন কি বাত’-এর শুরুতে আপনাদের সবার সঙ্গে একটা খুশির খবর ভাগ করে নিতে চাই। প্রত্যেক ভারতবাসীর এটা জেনে গর্ব হবে যে দেবী অন্নপূর্ণার একটি খুব পুরনো প্রতিমা কানাডা থেকে ভারতে ফিরে আসছে। এই প্রতিমা প্রায় একশো বছর আগে, ১৯১৩ সালের কাছাকাছি, বারাণসীর একটি মন্দির থেকে চুরি করে, দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কানাডার সরকার আর এই পুণ্য কর্মকে সম্ভব করার ক্ষেত্রে যুক্ত সব ব্যক্তির এই সহৃদয়তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মাতা অন্নপূর্ণার কাশীর সঙ্গে অত্যন্ত বিশিষ্ট একটি সম্বন্ধ আছে। এখন তার প্রতিমার ফেরত আসা আমাদের সবার জন্য আনন্দের। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমার মতই, আমাদের ঐতিহ্যের অনেক অমূল্য রত্ন, আন্তর্জাতিক চক্রের শিকার হয়ে চলেছে। এই চক্র আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলিকে খুব উঁচু দামে বিক্রি করে। এখন এদের উপর বল প্রয়োগ তো করা হচ্ছেই, এইসব সামগ্রী ফেরানোর জন্য ভারত নিজের প্রয়াস বাড়িয়েছে। এমনই প্রচেষ্টার কারণে বিগত কয়েক বছরে ভারত অনেক প্রতিমা এবং শিল্পসামগ্রী ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছে। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমা ফেরত আসার সঙ্গে আরও একটি ঘটনার সংযোগ রয়েছে। কিছু দিন আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পালিত হয়েছে। সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পুরনো সময়ে ফিরে যাওয়ার, তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পর্বের খোঁজ নেওয়ার এক চিত্তাকর্ষক সুযোগ এনে দেয়। করোনা পর্ব চলা সত্ত্বেও এবার আমরা উদ্ভাবনী উপায়ে মানুষজনকে এই ‘হেরিটেজ উইক’ পালন করতে দেখলাম। সঙ্কটের সময় সংস্কৃতি খুব কাজে লাগে, এর মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমেও সংস্কৃতি আবেগের উদ্দীপনার এক মত কাজ করে। আজ দেশে অনেক সংগ্রহশালা আর গ্রন্থাগার নিজেদের সংগ্রহকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার কাজে যুক্ত। দিল্লীতে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা এই ব্যাপারে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা প্রায় দশটি ভার্চুয়াল গ্যালারি গঠনের জন্য কাজ করছে – এটা আকর্ষণীয় নয় কি! এখন আপনি ঘরে বসে দিল্লীর ন্যাশনাল মিউজিয়ামের গ্যালারি ঘুরে দেখতে পারবেন। যেখানে একদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বেশি-বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যদিকে এই ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমি একটি আকর্ষণীয় প্রকল্পের ব্যাপারে পড়ছিলাম। নরওয়ের উত্তরে স্ফালবার্ড নামে একটি দ্বীপ আছে। এই দ্বীপে আর্কটিক ওয়ার্ল্ড আর্কাইভ নামে একটি প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এই আর্কাইভে বহুমূল্য হেরিটেজ সংক্রান্ত তথ্য এমনভাবে রাখা আছে যে কোনো রকম প্রাকৃতিক বা মানুষের তৈরি বিপর্যয়ে তা প্রভাবিত হবে না । একেবারে সম্প্রতি এটাও জানা গিয়েছে যে অজন্তা গুহার সম্পদকেও ডিজিটাইজ করে এই প্রজেক্টে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে অজন্তা গুহার পুরো দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে। এখানে ডিজিটালাইজড এবং রেস্টোরড পেইন্টিংয়ের সঙ্গে-সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র এবং উদ্ধৃতি যুক্ত থাকবে। বন্ধুরা, মহামারী যেখানে একদিকে আমাদের কাজকর্মের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। প্রকৃতিকে দেখার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন আমরা শীতের মরশুমে প্রবেশ করছি। আমরা প্রকৃতির ভিন্ন-ভিন্ন রঙ দেখতে পাব। বিগত কয়েকটি দিন চেরি ব্লসমের ভাইরাল ছবিতে পরিপূর্ণ রয়েছে ইন্টারনেট। এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন যে যখন আমি চেরি ব্লসমের কথা বলছি তখন জাপানের এই প্রসিদ্ধ পরিচিতির কথা বলছি – কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়! এগুলো জাপানের ছবি নয়! এগুলো আমাদের মেঘালয়ের শিলঙের ছবি। মেঘালয়ের অপরূপ সৌন্দর্যকে এই চেরি ব্লসম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্ধুরা, এই নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে ডক্টর সালিম আলি-জীর একশো পঁচিশতম জন্মজয়ন্তী সমারোহ শুরু হয়েছে। ডক্টর সালিম পাখিদের জগতে বার্ড ওয়াচিংয়ের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। দুনিয়ার পক্ষী বিশারদদের ভারতের প্রতি আকৃষ্টও করেছেন। আমি চিরদিন বার্ড ওয়াচিং-এ অনুরক্ত মানুষদের কদর করি। অনেক ধৈর্য নিয়ে, তারা, ঘন্টার পর ঘন্টা, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি, বার্ড ওয়াচিং করতে পারেন, প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যের আনন্দ নিতে পারে, আর নিজেদের জ্ঞানকে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ভারতেও অনেক বার্ড ওয়াচিং সোসাইটি সক্রিয়। আপনারাও অবশ্যই এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হোন। আমার দৌড়ঝাপের জীবনেও, বিগত দিনে কেবাড়িয়াতে পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর স্মরণীয় সুযোগ আমিও পেয়েছিলাম। পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হবেন আর পরিবেশ ভাবনা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সংস্কৃতি ও শাস্ত্র সবসময়ই সমগ্র বিশ্বের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেক মানুষই তো এর খোঁজে ভারতে আসেন আর চিরকালের জন্য এখানকার হয়েই থেকে যান। আবার অনেক লোক নিজের দেশে ফিরে গিয়ে এই সংস্কৃতির সংবাহক হয়ে ওঠেন। আমার জোনেস মেসেত্তি-র কাজের সম্বন্ধে জানার সুযোগ হয়, যিনি ‘বিশ্বনাথ’ নামেও পরিচিত। জোনেস ব্রাজিলের মানুষদের বেদান্ত আর গীতা শেখান। উনি ‘বিশ্ববিদ্যা’ নামক একটি সংস্থা চালান, যা রিও ডি জেনিরো থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে পেট্রোপোলিসের পাহাড়ে অবস্থিত। জোনেস মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর, স্টক মার্কেটের এক কোম্পানিতে কাজ করেন। পরে ভারতীয় সংস্কৃতি বিশেষ করে বেদান্তের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। স্টক থেকে আধ্যাত্মিকতা, বাস্তবে ওনার যাত্রা পথ অতি সুদীর্ঘ। জোনেস ভারতে বেদান্ত দর্শন নিয়ে অধ্যয়ন করেন আর চার বছর পর্যন্ত কোয়েম্বাটুরের আর্শ বিদ্যা গুরুকুলামে থাকেন। জোনেসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি নিজের মেসেজ সকলের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। উনি নিয়মিত অনলাইন প্রোগ্রাম করেন। প্রতিদিনর পডকাস্টও করেন। বিগত সাত বছরে জোনেস বেদান্তের উপর সকলের জন্য বিনামূল্যের পাঠক্রমের মাধ্যমে দেড় লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছেন। জোনেস শুধুমাত্র একটি বড় কাজই করছেন না, তাকে এমন ভাষায় করছেন, যাতে অনেক বেশি লোকের বুঝতে সুবিধে হয়। করোনা আর কোয়ারান্টাইনের এই সময়ে বেদান্ত কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটি জানার জন্য মানুষের এই বিষয়ে অনেক আগ্রহ আছে। মন কি বাত এর মাধ্যমে জোনেসের প্রয়াস গুলির জন্য তাঁকে অভিনন্দন এবং তাঁর ভবিষ্যত প্রচেষ্টার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, সম্প্রতি, এইরকমই, একটি খবরের প্রতি আপনাদের নজর নিশ্চয়ই গেছে। নিউজিল্যান্ডে ওখানকার নবনির্বাচিত সাংসদ, ডঃ গৌরব শর্মা বিশ্বের প্রাচীন ভাষাগুলির অন্যতম, সংস্কৃত ভাষায় শপথ গ্রহণ করেন। একজন ভারতীয় হয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির এই প্রসারে আমাদের গর্ব বোধ হয়। ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে গৌরব শর্মাজিকে শুভকামনা জানাই। আমাদের সবার এই কামনা রইল যে নিউজিল্যান্ডের মানুষের সেবায় উনি নতুন উচ্চতায় পৌঁছবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল ৩০ শে নভেম্বর। আমরা শ্রী গুরু নানক দেবজির ৫৫১তম প্রকাশ পর্ব উদযাপন করব। সমগ্র বিশ্বে গুরু নানাক দেবজির প্রভাব স্পষ্টরূপে দেখা যায়। ভ্যাঙ্কোবার থেকে ওয়েলিংটন , সিঙ্গাপুর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ওঁর উপদেশ সর্বত্রই শোনা যায়। গুরুগ্রন্থ সাহিব এ বলা হয়েছে “সেবক কো, সেবা বন আই ” অর্থাৎ সেবকের কাজ, সেবা করা। বিগত কিছু বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব এসেছে, আর একজন সেবক হিসেবে আমি অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। গুরু সাহিব আমার থেকে সেবা গ্রহণ করেন। এর আগে গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব, শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং জির ৩৫০তম প্রকাশ পর্ব ছিল। আর আগামী বছর শ্রী গুরু তেগবাহাদুর জির ৪০০তম প্রকাশ পর্ব। আমি অনুভব করি, যে গুরু সাহেবের আমার ওপর বিশেষ কৃপা আছে, তাই উনি সর্বদা আমায় নিজের কাজে, খুব কাছ থেকে যুক্ত করেছেন।
বন্ধুরা আপনারা কি জানেন কচ্ছে একটি গুরদ্বারা আছে- ‘লাখপত গুরদ্বারা সাহেব’ । শ্রী গুরু নানকজী নিজের বিষন্নতার সময়ে ‘লাখপত গুরদ্বারা সাহেবে’ থেকেছিলেন। ২০০১ এর ভূমিকম্পে এই গুরুদ্বারেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।এটা গুরু সাহেবেরই কৃপা যে আমি একে জীর্ণাবস্থা থেকে উদ্ধারের কাজ সুনিশ্চিত করতে পেরেছি। শুধু মেরামত নয়, এই গুরুদ্বারের বৈভব ও পূর্ব গৌরবকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সকলে গুরু সাহেবের আশীর্বাদ লাভ করেছি। লখপত গুরুদ্বার সংরক্ষণের প্রয়াসকে ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর এশিয়-প্রশান্তমহাসাগরিয় হেরিটেজ পুরস্কারে এওয়ার্ড অফ ডিসটিংশন দেওয়া হয়। মেরামতের সময় শৈল্পিক খুঁটিনাটি কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জুরির মত ছিল। জুরি এও জানিয়েছিল, মেরামতের কাজে শিখ সসম্প্রদায়ের মানুষ শুধু যুক্ত ছিলেন তাই নয়, বরং তাদের তত্ত্বাবধানেই সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়। যখন আমি মুখ্যমন্ত্রীও ছিলাম না, তখনও লখপত গুরুদ্বার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওখানে গেলে আমি অসীম শক্তি পাই। সকলেই এই গুরুদ্বারায় যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে। গুরু সাহেব আমার থেকে অনেক সেবা গ্রহন করেছেন আর এই জন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। গত বছর নভেম্বরে কারতারপুর সাহেব করিডর খোলার ঐতিহাসিক ঘটনা হয়েছিল। এই বিষয়টিকে আমি জীবনভর মনের মনিকোঠায় রেখে দেব। এটা আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে আমাদের শ্রী দরবার সাহেবের সেবা করবার আরেকটি সুযোগ হয়েছে। আমার প্রবাসী শিখ ভাই বোনেরা এখন আরও সহজে দরবার সাহেবের সেবায় টাকা পাঠাতে পারবেন। এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে গোটা বিশ্বে তাঁরা যে যেখানে আছেন দরবার সাহেবের আরও নিকটে এসে গেলেন।
বন্ধুরা, গুরু নানকজীই লঙ্গরের প্রথা আরম্ভ করেন। আমরা করোনা মহামারীর এই সময়ে দেখলাম কিভাবে শিখ ভাই বোনেরা তাদের এই পরম্পরাকে বজায় রেখে মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এই পরম্পরা আমাদের জন্য প্রেরণাস্বরূপ। আমার চাই, আমরা সকলে সেবক হয়ে কাজ করে যাই। গুরু সাহেব আমার থেকে ও আমার দেশবাসীর থেকে এভাবেই সেবা নিতে থাকুন। আরও একবার, গুরু নানক জয়ন্তীতে সকলকে জানাই অনেক অনেক শুভ কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কয়েকদিনে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার, তাদের শিক্ষালাভের মহত্ত্বপূর্ণ ঘটনার অংশীদার হওয়ার সুযোগ হয়। আইআইটি গুয়াহাটি, আইআইটি দিল্লি, গান্ধীনগরের দীনদয়াল পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটি, দিল্লীর জেএনইউ, মাইশোর বিশ্ববিদ্যালয় ও লক্ষনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রযুক্তির সাহায্যে আমি যোগাযোগ করতে পেরেছি। দেশের যুবসম্প্রদায়ের মাঝে থাকতে পারলে মন তরতাজা ও উজ্জীবিত হয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর এক ধরনের মিনি ইন্ডিয়া। একদিকে যেমন এই ক্যাম্পাসগুলোতে ভারতের বিবিধতা নজরে আসে, অন্যদিকে নতুন ভারত তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার ইচ্ছেও চোখে পড়ে। করোনা মহামারীর আগে যখন আমি সশরীরে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যেতাম, তখন আমি অনুরোধও করতাম যে আশপাশের স্কুলের গরিব ছাত্রছাত্রীদেরও তাতে আমন্ত্রণ জানানো হোক। এই বাচ্চারা আমার বিশেষ অতিথি হিসেবে আসত। একজন ছোটো বাচ্চা যখন এই বিরাট সমারোহে কাউকে ডাক্তার, কাউকে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী হতে দেখে, কাউকে মেডেল নিতে দেখে, তখন তার মনেও নতুন স্বপ্ন জাগে। ‘ আমিও পারি’- এই আত্মবিশ্বাস জাগে। নতুন সংকল্পের অনুপ্রেরণা পায়।
বন্ধুরা, আর একটি বিষয় সম্পর্কে আমার সবসময়ে কৌতূহল থাকে সেটা হল এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনি কারা, সেই প্রাক্তনিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কি ব্যবস্থা, এঁদের প্রাক্তনিদের সঙ্গে যোগাযোগ কতটা কার্যকরী।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা ততক্ষণ পর্যন্তই কোন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যার্থী হন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সেখানে পড়াশোনা করেন, কিন্তু সেখানকার প্রাক্তনি আপনারা আজীবন থাকেন। স্কুল কলেজ থেকে বেরোনোর পরেও দুটি বিষয় কখনো শেষ হয় না। প্রথম – আপনার শিক্ষার প্রভাব, এবং দ্বিতীয় – নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে আপনার আত্মিক যোগ। যখন প্রাক্তনিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন তখন স্কুল-কলেজ নিয়ে তাঁদের স্মৃতির মধ্যে বইপত্র, পড়াশোনার থেকেও ক্যাম্পাসে কাটানো সময়, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো বেশি করে উঠে আসে। আর সেই স্মৃতির মধ্য থেকেই জন্ম নেয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। যেখানে আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেছে, তার উন্নতির জন্যে আপনি যদি কিছু করেন তার থেকে আনন্দের কথা আর কী হতে পারে! আমি এমন কিছু প্রয়াসের সম্বন্ধে পড়েছি যেখানে প্রাক্তন ছাত্ররা নিজেদের পুরনো প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছেন। আজকাল প্রাক্তনীরা এ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সক্রিয়। আইআইটিয়ানরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স সেন্টার , ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ইনকিউবেশন সেন্টার ইত্যাদি অনেক পৃথক পৃথক ব্যবস্থা নিজেরাই তৈরি করে দিয়েছেন। এই সমস্ত উদ্যোগ বর্তমান বিদ্যার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। আইআইটি দিল্লি একটি এনডাওমেন্ট ফান্ডের সূচনা করেছে যা একটি দুর্দান্ত আইডিয়া। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ ধরনের এনডাওমেন্ট তৈরি করার সংস্কৃতি রয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে। আমার মনে হয় ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এই সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম। যখন প্রতিদানে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ওঠে তখন কোন কিছুই বড় বা ছোট হয়না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাহায্যও অর্থ বহন করে। প্রতিটি প্রয়াসই হয় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায়শই প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তির মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে, পুরষ্কার ও বৃত্তি চালু করার ক্ষেত্রে, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচী শুরু করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোন কোন স্কুলের “প্রাক্তনী সংগঠন” মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আলাদা আলাদা ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করেন। একই সঙ্গে শিক্ষার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বহু স্কুলে বিশেষ করে বোর্ডিং স্কুলগুলির প্রাক্তনীদের সংগঠন অত্যন্ত সক্রিয়, তাঁরা ক্রীড়ানুষ্ঠান এবং কমিউনিটি সার্ভিসের মতো কর্মসূচির আয়োজন করে থাকেন। আমি প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ করতে চাইব, তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন তার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরো বেশি মজবুত করতে থাকুন। তা স্কুল হোক কলেজ হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলির কাছেও আমার অনুরোধ প্রাক্তনীদের যুক্ত করার নতুন ও উদ্ভাবনী উপায় নিয়ে কাজ করুন। সৃজনশীল প্লাটফর্ম তৈরি করুন যাতে প্রাক্তনীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়। শুধু বড় কলেজ আর ইউনিভার্সিটিই নয়, গ্রামের স্কুলগুলিরও দৃঢ়, প্রাণবন্ত সক্রিয় প্রাক্তনী নেটওয়ার্ক হোক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পাঁচই ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দের পুণ্য তিথি। শ্রী অরবিন্দকে আমরা যত পড়ি ততই গভীরতা খুঁজে পাই। আমার যুবক বন্ধুরা শ্রী অরবিন্দকে যত জানবেন ততই নিজেকে জানতে পারবেন, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। আপনার জীবনের যে চিন্তাভাবনা ও পরিস্থিতির মধ্যে আপনি রয়েছেন, যেসব সংকল্পকে সফল করার জন্য আপনি সচেষ্ট, তার মধ্যে সবসময়ই শ্রী অরবিন্দকে নতুন প্রেরণাদায়ক হিসেবে, এক নতুন পথের দিশারী রূপে আপনি পাবেন। যেমন আজ যখন আমরা “লোকাল ফর ভোকাল” – এই অভিযানে শামিল হয়ে অগ্রসর হচ্ছি তখনো অরবিন্দের স্বদেশী দর্শন আমাদের পথ দেখায়। শ্রী অরবিন্দ তাঁর স্বদেশীর প্রেরণা নিজের পরিবার থেকে পেয়েছিলেন। তাঁর মাতামহ শ্রী রাজনারায়ণ বসু বাংলার খুব বড় একজন চিন্তাবিদ ছিলেন। বাংলায় তার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা আছে।
“শুই সুতো পর্যন্ত আসে তুঙ্গ হতে।
দিয়াশালাই কাঠি, তাও আসে পোতে।।
প্রদীপটি জ্বালিতে খেতে, শুতে, যেতে।
কিছুতে লোক নয় স্বাধীন”।।
অর্থাৎ আমাদের এখানে সূঁচ এমনকি দেশলাইও বিদেশি জাহাজে করে আসে। খাওয়া-দাওয়া, শোওয়া কোন বিষয়েই মানুষ স্বাধীন নয়। নিজের দাদুর মনের এই কষ্ট শ্রীঅরবিন্দের শিশুমনকেও প্রভাবিত করেছিল। এরপরই উনি স্বাদেশীকতাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিলেন। উনি বলতেন, স্বাদেশীকতার অর্থ হলো আমরা আমাদের ভারতীয় কর্মচারী এবং কারিগরদের তৈরি করা জিনিসকে প্রাধান্য দেব। এমনও নয় যে শ্রী অরবিন্দ বিদেশিদের থেকে কোনো কিছু শেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন। যেখানে যা নতুন আছে, সেখান থেকে আমরা শিখব, আমাদের দেশে যা কিছু ভালো হতে পারে, আমরা তার সঙ্গে সহযোগিতা করব এবং উৎসাহ প্রদান করব, এটাই তো আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ভোক্যাল ফর লোক্যাল মন্ত্রের ভাবনা। বিশেষ করে স্বাদেশিকতাকে আপন করে নেওয়ার বিষয়ে উনি যা কিছু বলেছিলেন, তা আজ প্রত্যেক দেশবাসীর পড়া উচিত। বন্ধুরা, এভাবেই শিক্ষার বিষয়েও শ্রী অরবিন্দের বক্তব্য খুবই সুস্পষ্ট ছিল। উনি শিক্ষাকে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান, ডিগ্রি এবং চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় বিশ্বাস করতেন না। শ্রী অরবিন্দ বলতেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, আমাদের যুবসমাজের মন এবং মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বৈজ্ঞানিক বিকাশ হবে এবং মনে ভারতীয় চিন্তা-ভাবনাও থাকবে, তবেই একজন যুবক দেশের আরও ভালো নাগরিক হতে পারবে। শ্রী অরবিন্দ রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিষয়ে যে কথা বলেছিলেন, যে প্রত্যাশা করেছিলেন, আজ দেশ তাকেই নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে পূর্ণ করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতে কৃষিক্ষেত্র এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক যুক্ত জিনিসে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে চলেছে। কিছুদিন আগে হওয়া কৃষি সংশোধনীতে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খোলা হয়েছে । বহু বছর ধরে কৃষকদের যে দাবি ছিল, যে দাবিগুলো পূরণ করার জন্য কোন না কোন সময়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ওঁদের কথা দিয়েছিল, সেই সব দাবি পূরণ হয়েছে। অনেক বিচার বিবেচনার পরে ভারতীয় সংসদ কৃষি সংশোধনীকে আইনি স্বরূপ দিয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে কৃষকদের অনেক সীমাবদ্ধতারই কেবল সমাপ্তি হয়নি, বরং ওঁরা নতুন অধিকার পেয়েছেন, নতুন সুযোগও পেয়েছেন। এই অধিকার অনেক কম সময়েই কৃষকদের অনেক সমস্যা কমাতে শুরু করে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলার কৃষক জিতেন্দ্র ভৈজী এই নতুন কৃষি আইনের ব্যবহার কিভাবে করেছেন তা আপনাদের সকলের জানা উচিত। জিতেন্দ্র ভৈজী ভুট্টার চাষ ও সেই ফসল সঠিক দামে ব্যবসায়ীদের বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফসলের মোট মূল্য নির্ধারিত হয় প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। জিতেন্দ্র ভাই প্রায় ২৫০০০ টাকা এডভান্সও পেয়েছিলেন। এটাই ঠিক করা হয়েছিল যে বকেয়া টাকা উনি ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিল যে উনি বাকি টাকা পাননি। কৃষকের থেকে ফসল কিনে নাও, অথচ মাসের-পর-মাস টাকা দিও না, সম্ভবত ভুট্টা ক্রেতা বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই ধারাকেই অনুসরণ করেছিলেন। এভাবেই প্রায় চার মাস ধরে জিতেন্দ্র জির টাকা শোধ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে পাশ হওয়া সংশোধনী যা কৃষি আইন হিসেবে রূপায়িত হলো, সেটাই ওঁর কাজে লাগলো। এই আইনে এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ফসল কেনার তিন দিনের মধ্যে কৃষককে পুরো মূল্য দিয়ে দিতে হবে, যদি এই মূল্য দেওয়া না হয় তাহলে কৃষক অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এই আইনে আরও একটা বড় বিষয় রয়েছে যে, এই আইন অনুযায়ী কোন অঞ্চলের এসডিএম কে এক মাসের ভেতর কৃষকের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে। এখন যখন এরকম আইনের শক্তি আমাদের কৃষক বন্ধুদের কাছে আছে তাহলে ওঁদের সমস্যার সমাধান তো হওয়াই উচিৎ ছিল। উনি অভিযোগ করেছিলেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ওঁর বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আইনের সঠিক এবং সম্পূর্ণ জ্ঞানই জিতেন্দ্র জির শক্তি হল।
যে কোনও ক্ষেত্রই হোক, সব ধরনের ভুল বা গুজবের থেকে দূরে থেকে, সঠিক তথ্য প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্বল হয়ে ওঠে। কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাজস্থানের বারাঁ জেলার বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম জী এমন একটা কাজ করছেন। কিষান উৎপাদক সংস্থার সিইও ও তিনি। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনছেন কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থার সিইও! আশা করি বড়ো বড়ো কোম্পানির সিইওরা জেনে খুশি হবেন যে দেশের দূর দূরান্তেও কিষাণ সংস্থার সিইও হয়ে উঠছেন অনেকেই। হ্যাঁ বন্ধুরা, মহম্মদ আসলাম জী নিজের কর্মক্ষেত্রের অন্যান্য অনেক কৃষকদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন। এই গ্রুপে প্রতিদিন তিনি আসপাশের বাজারের দর হালচাল কি তা কিষাণদের জানিয়ে দিচ্ছেন। ওঁর নিজের এফপিও ও চাষীভাইদের থেকে ফসল কেনে, তাই ওঁর এই প্রচেষ্টায় কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়।
বন্ধুরা, সচেতন হলেই সজীবতা গড়ে ওঠে। নিজের সচেতনতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন প্রভাবিত করার আরেক কৃষি উদ্যোগী বীরেন্দ্র যাদব জী। বীরেন্দ্র যাদব জী কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন! দু বছর আগে তিনি দেশে ফিরে এখন হরিয়ানার কৈথল এ থাকেন। অন্যান্য কৃষকদের মতো তাঁরও ক্ষেতে পড়ে থাকা খড় নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো। এর সমাধানের জন্য ব্যাপক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রজীর কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ কারণ ওঁর প্রচেষ্টা ব্যতিক্রমী। তা এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। পড়ে থাকা বাড়তি খড়ের সমস্যার সমাধানে বীরেন্দ্রজী বিচালি আটি বাঁধার জন্য স্ট্র বেলার মেশিন কিনেছেন। এর জন্য তিনি কৃষি বিভাগের আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন। ঐ মেশিনের সাহায্যে তিনি বাড়তি খড়ের গাঁটরি বানানো শুরু করেছিলেন। এই গাঁটরি এগ্রো এনার্জি প্ল্যান্ট এবং পেপার মিলে বিক্রি করছেন। আপনারা শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবেন বীরেন্দ্রজী ক্ষেতের ঐ বাড়তি খড় থেকে দু বছরে দেড় কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছেন এবং তার থেকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছেন। যে সব কৃষকেরা বীরেন্দ্রজীর ক্ষেত থেকে বাড়তি খড় তুলতেন তাঁদেরও উপকার হলো। আমরা আস্তাকুঁড় থেকে মণিকাঞ্চন বানানোর কথা শুনেছি, তবে বাড়তি খড় কাজে লাগিয়ে অর্থ ও পুণ্য অর্জনের এ এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ! আমার তরুণ বন্ধুরা বিশেষ করে কৃষিবিদ্যা নিয়ে যে লক্ষ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করছেন তাঁদের উদ্দেশে বলছি আপনারা আপানাদের আশেপাশের গাঁয়ের কৃষকদের কে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, কৃষি সমস্যার যে সব সাম্প্রতিক সমাধান প্রক্রিয়া হয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করুন। এর সাহায্যে আপনি দেশে যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে তার সহযোগী হয়ে উঠতে পারবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা আলাদা আলাদা নানান রকম বিষয় নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এমন একটা কথা এক বছর ধরে চলছে যা আমরা খুশি মনে আলোচনা করতে চাই না। প্রায় এক বছর হতে চললো বিশ্বে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর জেনেছি। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্ব নানান উত্থান পতন দেখেছে। লক ডাউন পর্ব পেরিয়ে এখন ভ্যাক্সিন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ে যে কোনো রকম অসাবধানতা খুবই ভয়ংকর। করোনা নিয়ে আমাদের কঠোর লড়াই চালু রাখতে হবে৷
বন্ধুরা, কয়েকদিন বাদে ৬ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকরের পুণ্য তিথি। এই দিন বাবাসাহেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য, সংবিধান একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কি দায়িত্ব দিয়েছে সে সবও আরেকবার মনে করার সময়। দেশের বৃহত্তর ভাগে শীত ক্রমশ জাঁকিয়ে পড়ছে। অনেক জায়গায় বরফ পড়ছে। এই মরশুমে বাচ্চাদের, বয়স্কদের, অসুস্থ মানুষদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর রাখতে হবে। আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ নিজের চারপাশের অসহায় মানুষের চাহিদার কথা খেয়াল রাখে। শীতার্তকে গরম জামাকাপড় দেওয়া এমনই একটা কাজ। আশ্রয়হীন পশুদেরও এই শীতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে আবার এদিকেও খেয়াল রাখেন। আমাদের যুব সমাজ এসব ব্যাপারে বেশ আগ্রহের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করে। বন্ধুরা, এর পরের ‘মন কি বাত’ এর সময় ২০২০ সাল শেষ হয়ে আসবে।নতুন অঙ্গীকার, নতুন বিশ্বাস নিয়ে আমরা অগ্রসর হবো। এখন আপনাদের নতুন নতুন পরামর্শ, ভাবনা আমার কাছে পাঠাতে থাকুন। আপনাদের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাই। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, দেশের জন্য কাজ করতে থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
***
CG/CB |
mkb-4 | 848d34c119e76dc20eb2cc3d5a4d416ee66ff15d50020a31f709d6540f803b56 | ben | আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সকলকে নমস্কার।৩১ অক্টোবর আমাদের সবার প্রিয় সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মজয়ন্তী উদযাপন এবং অন্যান্য বছরের মতোই ‘রান ফর ইউনিটি’তে দেশের যুবশক্তির একতার লক্ষ্যে দৌড়বার জন্যে আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।এখন তো আবহাওয়াও খুব চমৎকার। তার ফলে ‘রান ফর ইউনিটি’র উদ্দীপনা আরোই বাড়বে।আমার ইচ্ছা, আপনারা সকলে বিরাট সংখ্যায় একতার এই দৌড়ে অবশ্যই অংশ নিন।স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে ছ’ মাস আগে, বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ২৭ জানুয়ারি, ১৯৪৭-এরসংস্করণে প্রচ্ছদে সর্দার পটেলের ছবি ছাপা হয়েছিল। ‘টাইম’ সেবার তার লিড স্টোরিতে ভারতের একটি নকশা দিয়েছিল।আমরা আজ যেমন দেখি, সেই নকশা কিন্তু ঠিক তেমনটি ছিল না।সে ছিল বহুধা বিভক্ত এক ভারত। তখন ৫৫০-টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য ছিল।ভারতের ব্যাপারে ইংরেজদের আগ্রহ যদিও তখন ফুরিয়ে গিয়েছিল, তবু এই দেশকে তারা ছিন্নভিন্ন করে রেখে যেতে চেয়েছিল। ‘টাইম’ ম্যাগাজিন লিখেছিল, বিচ্ছিন্নতা, হিংসা, খাদ্য-সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্ষমতাররাজনীতির মতো বিপদ ভারতকে ছেয়ে আছে– কিন্তু এসবের মধ্যেও দেশকে একতার সূত্রে বাঁধবার ক্ষমতা যদি কারোর থেকে থাকে তবে তিনি সর্দার বল্লভভাই পটেল। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ওই লেখাটি সেই লৌহ পুরুষের জীবনের অন্যান্য দিকগুলিতেও আলোকপাত করেছিল— কীভাবে তিনি গত শতাব্দীর দুইয়ের দশকে আমেদাবাদে বন্যাত্রাণের ব্যবস্থা করেছিলেন, কীভাবে তিনি বারদৌলি সত্যাগ্রহকে দিশা দেখিয়েছিলেন।দেশের জন্যে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দায়বদ্ধতা এতটাই ছিল যে সাধারণ কৃষক, মজদুর থেকে শুরু করে বড় বড় উদ্যোগপতিরা পর্যন্ত সকলে তাঁর ওপরে ভরসাকরতেন।গান্ধীজি সর্দার প্যাটেলকে বলেছিলেন, রাজ্যগুলির সমস্যা এতটাই ভয়াবহ যে একমাত্র আপনি এর সমাধান-সূত্র বার করতে পারেন।সর্দার প্যাটেল সত্যিই এক এক করে সমস্যাগুলির সমাধানের রাস্তা বের করলেন এবং গোটা দেশকে একতার সূত্রে গেঁথে ফেলার আপাত অসম্ভব কাজটিও সম্পন্ন করে দেখালেন। সব ক’টি দেশীয় রাজ্যকে তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, তা সে জুনাগড়ই হোক বা হায়দরাবাদ, ত্রিবাংকুর বা রাজস্থানের দেশীয় রাজ্যগুলি।সর্দার প্যাটেলই ছিলেন সেই একমাত্র ব্যক্তি যাঁর বুদ্ধি বিবেচনা এবং রণ নীতির কৌশলে আজ আমরা অখণ্ড ভারতবর্ষকে দেখতে পাচ্ছি। একতার বাঁধনে বাঁধা এই রাষ্ট্রকে, আমাদের ভারত মা-কে দেখলে স্বভাবতই আমাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পুণ্যস্মৃতির কথা মনে পড়ে। এই ৩১ অক্টোবর সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী তো আরোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই দিন তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে আমরা ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেব। গুজরাটে নর্মদা নদীর তীরে স্থাপিত এই মূর্তিটি উচ্চতায় আমেরিকার ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র দ্বিগুণ। এটি হবে বিশ্বের উচ্চতম গগনচুম্বী স্থাপত্য। প্রতিটি ভারতীয় এবার গর্ব করে বলতে পারবেন যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি এখন ভারতভূমিতে রয়েছে। যে পুণ্যভূমির সঙ্গে সর্দার পটেলের সংযোগ ছিল, এই মূর্তি এবার তারই আকাশসীমাকেও আলোকিত করবে। আমি আশা রাখি, দেশের প্রতিটি নাগরিক ‘মা ভারতী’র এই মহান উপলব্ধি নিয়ে বিশ্বের সামনে বক্ষ প্রসারিত করে, মাথা উঁচু করে তার গৌরব গান করবেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দুস্থানের প্রতিটি মানুষ এখন ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ দেখতে আগ্রহী হবেন। আমার বিশ্বাস, সারা দেশে এই বিশেষ স্থাপত্য এক প্রিয় দ্রষ্টব্য বলে চিহ্নিত হবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গতকাল আমরা ‘Infantry Day’ পালন করেছি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে আমি প্রনাম জানাচ্ছি। সৈনিকদের পরিবারকেও তাদের মানসিকতার জন্য স্যালুট করছি। আপনারা কি জানেন, কেন ভারতবাসী ‘Infantry Day’ পালন করে? এটা সেই দিন, যেদিন ভারতীয় সেনার জওয়ানরা কাশ্মীরের মাটিতে নেমেছিল এবং অনুপ্রবেশকারীদের থেকে এই উপত্যকাকে রক্ষা করেছিল। এই ঐতিহাসিক ঘটনাও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি ভারতের মহান সৈনিক সাম মানেকশ-এর একটি পুরনো সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। এই সাক্ষাৎকারে ফিল্ড মার্শাল মানেকশ ঐ সময়ের কথা বলেছেন, যখন তিনি কর্ণেল ছিলেন।
ঐ সময়, ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরে সৈন্য অভিযান শুরু হয়েছিল। ফিল্ড মার্শাল মানেকশ বলেছেন, ঐ সময় কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে দেরী হওয়ার জন্য এক বৈঠকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কেমন বিরক্ত হয়েছিলেন। বৈঠকের মধ্যে সর্দার প্যাটেল নিজের অভ্যস্ত ঢংয়ে মানেকশ’র দিকে তাকিয়ে বলেন, কাশ্মীরে সেনা অভিযানে কোনও রকম বিলম্ব করা চলবে না এবং যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমাদের সৈনিকরা বিমানে করে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় আর তারা কেমন সাফল্য পেয়েছিল সেটা আমরা দেখেছি। আগামী ৩১-শে অক্টোবর আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস। ইন্দিরাজীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, খেলাধূলা পছন্দ করে না এমন মানুষ আছেন কি? খেলার জগতে Spirit, Stamina, Strength, Skill ইত্যাদি বিষয়গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও খেলোয়াড়ের সাফল্যের মাপকাঠি এই সকল গুণ। আবার অন্য দিকে রাষ্ট্র নির্মাণেও এই চারটি গুণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও দেশের যুবকদের মধ্যে এই সকল গুণ থাকলে তারা কেবলমাত্র দেশের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেই উন্নতি করবে তা নয়, খেলাধূলার ক্ষেত্রেও দেশের বিজয় পতাকা তুলে ধরবে। সম্প্রতি, আমার দুটি সাক্ষাৎ হয়েছে, যা মনে রাখার মতো। প্রথমত, জাকার্তায় অনুষ্ঠিত Asian Para Games, 2018-য় অংশগ্রহণকারী para athlete-দের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই গেমস-এ মোট ৭২-টি পদক জিতে ভারত এক নূতন রেকর্ড গড়েছে এবং দেশের সম্মান বাড়িয়েছে। এই সব প্রতিভাবান প্যারা-অ্যাথলিটদের প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আমি প্রত্যেককে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাঁদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস আমাদের সকল দেশবাসীর কাছে প্রেরণাস্বরূপ। একই ভাবে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত Summer Youth Olympics, 2018-য় আমাদের বিজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিত হওয়ারও সুযোগ পেয়েছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে Youth Olympics, 2018-তে আমাদের খেলোয়াড়রা অন্যান্য বারের থেকেও ভালো প্রদর্শন করেছে। এই গেমসে আমরা ১৩-টি পদকের অতিরিক্ত Mix Event-এ আরও ৩-টি পদক জয় করেছি। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে যে এবার এশিয়ান গেমসেও ভারতের প্রদর্শন খুবই ভালো ছিল। দেখুন, গত কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি কতবার এখন পর্যন্ত সব থেকে ভালো, সব থেকে সুন্দর শব্দের ব্যবহার করেছি। এই হচ্ছে ভারতের খেলাধূলার কথা, যেটা প্রতিদিন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু খেলার জগতে নয়, ভারত অন্যান্য এমন কিছু ক্ষেত্রেও নূতন রেকর্ড বানাচ্ছে, যেগুলির কথা আমরা কখনও চিন্তাও করিনি। উদাহরণস্বরূপ, আমি আপনাদের প্যারা অ্যাথলেট নারায়ণ ঠাকুরের কথা বলবো, যিনি ২০১৮-র এশিয়ান প্যারা গেমসে দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিতেছেন। ইনি জন্ম থেকেই দিব্যাঙ্গ। আট বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। পরের আট বছর উনি এক অনাথাশ্রমে কাটান। অনাথাশ্রম ছাড়ার পর জীবন-গাড়ি চালানোর জন্য উনি DTC–র বাস পরিষ্কার করা এবং রাস্তার ধারের ধাবাতে ওয়েটারের কাজ করেন। এই নারায়ণই আজ international event-এ ভারতের জন্য স্বর্ণপদক জিতেছেন। শুধু এটাই নয়, ভারতে খেলাধূলার ক্ষেত্র এমন বিস্তৃতি লাভ করছে যে জুডো-র মতো ইভেণ্ট, যেখানে ভারত আজ পর্যন্ত জুনিয়র বা সিনিয়র লেভেল-এ কোনও অলিম্পিক পদক পায়নি, সেখানে তবাবী দেবী Youth Olympics-এ জুডোতে রৌপ্যপদক জিতে নূতন ইতিহাস বানিয়েছেন। ষোড়শ বর্ষীয়া যুবতী তবাবী দেবী মণিপুরের এক গ্রামে থাকেন। তাঁর বাবা একজন দিনমজুর এবং মা মাছ বিক্রি করেন। অনেকবার এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে তাঁদের কাছে খাবার কেনার অর্থও থাকতো না। এইরকম পরিস্থিতিও তবাবী দেবীর উদ্দীপনার কাছে হার মেনেছে। উনি দেশের জন্য পদক জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এরকম আরও অনেক কাহিনি আছে, তাঁদের প্রত্যেকের জীবন প্রেরণার উৎস। প্রত্যেক তরুণ খেলোয়াড়, তাদের উৎসাহ New India–র পরিচয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবার মনে আছে, আমরা ২০১৭-য় FIFA UNDER 17 WORLD CUPঅত্যন্ত সফলভাবে সংগঠিত করেছি। সারা বিশ্বের সফলতম টুর্নামেন্টের মধ্যে তা প্রশংসিতও হয়েছে। FIFA UNDER 17 WORLD CUPরেকর্ড ভেঙেছে দর্শকের সংখ্যায়। দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশি দর্শক ফুটবল দেখেছে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছে। এবারে ভারত ভুবনেশ্বরে ওয়ার্ল্ডকাপ হকি সংগঠনের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। হকি ওয়ার্ল্ডকাপ ২৮শে নভেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। যে কোনো ভারতীয় যে খেলাই ভালোবাসুন না কেন, তাদের মনে হকির জন্য আলাদা একটা জায়গা রয়েছে। হকি খেলায় ভারতের স্বর্ণময় ইতিহাস রয়েছে। অতীতে ভারত কয়েকবার সোনা জিতেছে, একবার বিশ্বকাপ জয়ও করেছে। ভারত হকি খেলার জগতে কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ও উপহার দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় হকি নিয়ে চর্চা হলে ভারতের নাম বাদ দিলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদ সারা বিশ্বে পরিচিতি। এছাড়া বলবিন্দর সিং সিনিয়র, লেসলি ক্লডিয়াস, মহম্মদ সহীদ, উধম সিং থেকে ধনরাজ পিল্লাই হকি বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে। আজও টিম ইন্ডিয়ার হকি খেলোয়াড়েরা শ্রম ও নিষ্ঠায় নতুন প্রজন্মের কাছে সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়ে তুলছে। ক্রীড়াপ্রেমিকদের কাছে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়। ভুবনেশ্বরে গিয়ে খেলা দেখার সময় শুধু ভারতীয় দল নয় সব দেশকেই উৎসাহিত করবেন। ওড়িশা রাজ্যের নিজস্ব গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষের ঐতিহ্য রয়েছে এবং ওড়িশাবাসীদের উদ্দীপক চরিত্র ও মনে রাখতে হবে। ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ওড়িশা বেড়ানোও এক সুন্দর সুযোগ। খেলা দেখার ফাঁকে কোনারকের সূর্য মন্দির, পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে চিল্কা হ্রদের মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটনক্ষেত্র ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। আমি এই সুযোগে ভারতের পুরুষ হকি টিমকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সোয়াশো কোটি ভারতবাসীর সমর্থন রয়েছে। বিশ্বের বাকি দলগুলিকেও আমার শুভকামনা জানালাম।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সমাজসেবার কাজে বহু মানুষ এগিয়ে আসছে, ভলেন্টিয়ারিং করছে তারা, সারা দেশের মানুষের কাছে তা অত্যন্ত বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। এমনিতেই ‘সেবা হি পরম ধর্ম’ এই আদর্শের পরম্পরা রয়েছে। সমাজের প্রত্যেক স্তরেই এই আদর্শের প্রতিফলন রয়েছে। কিন্তু নতুন যুগের নব প্রজন্ম নতুন আগ্রহে, উদ্দীপনায়, নতুন নতুন উদ্যোগে সেই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কিছুদিন আগে একটা পোর্টাল উদ্বোধন-এ গেছিলাম, তার নাম – ‘সেল্ফ ফোর সোসাইটি ডট মাইগভ’ দেশের আই-টি এবং ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রির কর্মীদের সোস্যাল এক্টিভিটিসে আগ্রহী করতে এবং তার তাৎপর্য বোঝাতে এই পোর্টাল করা হয়েছে। এই কাজের জন্য যে ভাবে সেই পোর্টাল সাজানো হয়েছে দেখলে সবার ভালো লাগবে। আই টি থেকে সোস-আই-টি, আমি নই আমরা, অহং নয় সবার, ব্যক্তি থেকে সমষ্টি যাত্রার আলোর ছটা রয়েছে। কেউ শিশুদের পড়াচ্ছে — কেউ প্রবীণদের, কেউ বা স্বচ্ছতা অভিযানে লেগে পড়েছে, কেউ বা কৃষকদের উৎসাহিত করছেন নব প্রযুক্তিতে এবং এসবের পেছনে কোনো লোভী স্বার্থপরতা নেই, দেশ সেবা রয়েছে। একজন তরুণ এমন অঙ্গীকারও করেছেন যে হুইলচেয়ারে বাস্কেটবল খেলার জন্য নিজে হুইলচেয়ার বাস্কেটবল শিখছেন। এই যে মানসিকতা, এই যে আত্মনিয়োগ — এ হলো mission mode activity। কোনও ভারতবাসী আছেন যিনি এসব শুনে গর্বিত হবেন না, নিশ্চয়ই হবেন। ‘আমি নই আমরা’ এই ভাবনা আমাদের সবাইকে প্রেরণা যোগাবে।
আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, এইবার যখন আমি ‘মন কি বাত’ নিয়ে আপনাদের প্রস্তাবগুলো দেখছিলাম, তখন আমার পুদুচেরির শ্রী মণীশ মহাপাত্রর একটি খুব রোমাঞ্চকর মন্তব্য দেখার সুযোগ মেলে। তিনি mygov-এ লিখেছেন — আপনি দয়া করা এবারের ‘মন কি বাত’-এ এই বিষয়ে কথা বলুন যে কী করে ভারতের জনজাতি আর তার রীতি-রেওয়াজ, পরম্পরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে ওঠে। Sustainable Development-এর জন্য কী করে তাদের ঐতিহ্যকে আমরা আমাদের জীবনের অঙ্গীভূত করবো, তাদের থেকে কিছু শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে।
মণীশজী, ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের সামনে এমন একটা বিষয় রাখার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এটা এমন একটা বিষয় যা আমি আমাদের গৌরবপূর্ণ অতীত আর সংস্কৃতিকে ফিরে দেখার প্রেরণা যোগায়। আজ সারা বিশ্ব, বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলি পরিবেশ সংরক্ষণের আলোচনা করছে আর তার balance life অর্থাৎ ভারসাম্যযুক্ত জীবনশৈলীর জন্য নূতন রাস্তা খুঁজছে। আজ আমাদের ভারতবর্ষও এই সমস্যা থেকে দূরে নেই, কিন্তু এর সমাধানের জন্য আমাদের আত্মসমীক্ষা করতে হবে। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, পরম্পরাকে দেখতে হবে আর বিশেষ করে আমাদের যাবতীয় জনজাতির জীবনশৈলীকে বুঝতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেঁচে থাকা আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিতে রয়ে গেছে। আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনেরা গাছপালা আর ফুলের পুজো দেব-দেবীদের মতন করেই করে। মধ্যপ্রদেশের ভীল জনজাতি, বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের লোক বট, অর্জুনের মতো গাছকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজা করে। রাজস্থানের মতো মরুভূমিতে বিষ্ণোই সমাজ পরিবেশ সংরক্ষণের রাস্তা আমাদের দেখিয়েছে। গাছ সংরক্ষণের জন্য তারা নিজেদের জীবন ত্যাগ করতেও প্রস্তুত, কিন্তু একটা গাছেরও ক্ষতি স্বীকার করতে তারা প্রস্তুত নয়। অরুণাচলের মিশমী-রা বাঘের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের দাবী করে। তারা তাকে নিজেদের ভাই-বোন বলেই মানে। নাগাল্যাণ্ডেও বাঘকে বনের রক্ষক হিসেবেই দেখা হয়। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্লি সম্প্রদায়ের লোক বাঘকে অতিথি হিসেবে মানে। ওদের কাছে বাঘের অবস্থিতি সমৃদ্ধির প্রতীক। মধ্যপ্রদেশের কোলা সম্প্রদায় একটি ব্যাপার মানে যে ওদের নিজেদের ভাগ্য বাঘের সঙ্গে জুড়ে আছে। বাঘের যদি খাবার না মেলে তবে গ্রামবাসীকেও অভুক্ত থাকতে হবে — এমনই তাদের শ্রদ্ধা। মধ্যভারতের গোণ্ড জনজাতি breeding season-এ কেয়ন নদীর কিছু জায়গায় মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এই জায়গাগুলোকে ওরা মাছেদের আশ্রয়স্থল বলে মানে। এই প্রথা চলায় ওদের প্রচুর মাত্রায় তাজা মাছ মেলে। আদিবাসী সম্প্রদায় নিজেদের ঘর natural material থেকে তৈরি করে যা মজবুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ-বান্ধবও হয়। দক্ষিণ ভারতে নীলগিরি পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক ছোটো যাযাবর সম্প্রদায় আছে — তোড়া, যারা পরম্পরা অনুসারে তাদের বস্তিগুলো স্থানীয় স্তরে প্রাপ্ত জিনিস থেকেই বানিয়ে থাকে।
আমার প্রিয় ভাই বোনেরা, এটা সত্যি যে আদিবাসী সম্প্রদায় অনেক শান্তিপূর্ণ এবং নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে একসঙ্গে থাকায় বিশ্বাস করে, কিন্তু যখন কেউ তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি করে, তখন তারা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে ভয় পায় না। এটা কোনো আশ্চর্যের কথা নয় যে আমাদের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরাও ছিলেন। ভগবান বীরসা মুণ্ডাকে কে ভুলে যেতে পারে, যিনি নিজেদের বনভূমির রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করেছেন। আমি যাঁদের কথা বলছি সেই তালিকা অনেক লম্বা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এরকম অনেক উদাহরণ আছে, যাঁরা আমাদের শেখায় প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে বাঁচা যায়।আর আমাদের আশেপাশে যে বনসম্পদ বেঁচে আছে, এর জন্য আমাদের দেশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে ঋণী। আসুন, আমরা ওঁদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা সেইসব লোকেদের আর তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলি, যাঁরা সমাজের জন্য কিছু আসাধারণ কাজ করছেন। সেইসব কাজ, যেগুলো দেখলে মনে হয় সাধারণ কিন্তু বাস্তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনে ও সমাজের লক্ষ্য নির্ধারণে। কিছুদিন আগে আমি পঞ্জাবের গুরুবচন সিং-জীর সম্বন্ধে পড়ছিলাম। একজন সাধারণ ও পরিশ্রমী কৃষক গুরুবচন সিং-জীর ছেলের বিয়ে ছিল। এই বিয়ের আগে গুরুবচন সিং-জী কনের মা-বাবাকে বলেছিলেন যে এই বিয়ে তাঁরা অনাড়ম্বরে করবেন। বরযাত্রী হোক বা বিয়ের সামগ্রী, খরচা বেশি করার দরকার নেই, আমরা এই কাজ অতি সাধারণভাবেই সম্পন্ন করতে চাই। আবার উনি হঠাৎ করে বললেন, ওঁর একটি শর্ত আছে। আজকাল বিয়েতে শর্ত বললে সাধারণত মনে হয় উনি কোনও বড়ো পণের কথা বলতে যাচ্ছেন— এমন কিছু চাইবেন, যার ফলে কনের পরিবার মুশকিলে পড়ে যাবেন। কিন্তু আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন, ভাই গুরুবচন সিং ছিলেন সরল সাদাসিধা কৃষক, উনি কনের বাবাকে বললেন— যে শর্তের কথা বলছি সেটা সমাজের আসল শক্তি। গুরুবচন সিং-জী বললেন, আপনি আমাকে কথা দিন, এখন থেকে আপনি চাষের জমিতে ফসল কাটার পর যে অবশিষ্টাংশ পরে থাকবে, তাপোড়াবেন না। আপনি চিন্তা করতে পারেন,
এর মধ্যে কত বড় সামাজিক শক্তি লুকিয়ে আছে। গুরুবচন সিং-জীর এই কথা মনে হয় অতিসাধারণ, কিন্তু এটা প্রকট করে ওঁর ব্যক্তিত্ব, আর আমরা দেখেছি যে আমাদের সমাজে এইরকম অনেক পরিবার রয়েছে যারা ব্যক্তিগত বিষয়কে সমাজের ভালো কাজে পরিবর্তিত করেছেন।
শ্রী গুরুবচন সিং-জীর পরিবার এমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি পাঞ্জাবের আরেকটি গ্রাম কল্লর মাজরার সম্বন্ধে পড়েছি, যেটা নাভার পাশে অবস্থিত। কল্লর মাজরা এই জন্য শিরোনামে ছিল কারণ ওখানকার লোকেরা ধানের খড়বিচুলি না জ্বালিয়ে তাকে হাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, এর জন্য দরকারী Technology নিজেরাই তৈরি করেন। ভাই গুরুবচন সিং-জীকে শুভেচ্ছা জানাই। কল্লর মাজরা আর ওইসব জায়গার লোকেদের শুভেচ্ছা রইল, যাঁরা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সুস্থ জীবনশৈলীকে আপনারা সবাই সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেভাবে ফোঁটা ফোঁটা জল দিয়ে সমুদ্রের সৃষ্টি হয়, সেইভাবে এরকম ছোট ছোট সচেতনতা আর ইতিবাচক কাজ সবসময়ই ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে অনেক বড় সহায়ক হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে —
ওঁ দয়ৌ শান্তিঃ, অন্তরীক্শ শান্তিঃ,
পৃথিবী শান্তি, অপঃ শান্তি, ঔষধও শান্তিঃ।
বনস্পতয়ঃ শান্তি, বিশ্বেদেবাঃ শান্তি, ব্রহ্ম শান্তিঃ,
সর্বং শান্তি, শান্তিরেব শান্তি, সামা শান্তিরেধি।।
ওঁ শান্তিঃ, শান্তিঃ, শান্তিঃ।।
এর অর্থ হলো — হে ঈশ্বর,ত্রিলোকে শান্তির বাস হোক – জলে, পৃথিবীতে, আকাশে, অন্তরীক্ষে, অগ্নিতে, পবনে, ঔষধিতে, বনস্পতিতে, উপবনে, অবচেতনে – সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে শান্তির স্থাপনা কর, জীবমাত্রে, হৃদয়ে, আমার মধ্যে, তোমার মধ্যে, এই জগতের প্রত্যেকটি কণায় শান্তির স্থাপনা কর।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
যখনই বিশ্বশান্তির কথা হয়েছে ভারতবর্ষের নাম ও অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ভারতবর্ষের জন্যে এই বছর এগারোই নভেম্বর দিনটার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। কারণ একশো বছর আগে এগারোই নভেম্বরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অর্থাৎ সেই ভয়ংকর বিনাশ আর গণহত্যার শেষেরও একশো বছর হবে। ভারতের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সত্যি বলতে কি, এই মহাযুদ্ধের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের সৈনিকরা এই যুদ্ধে বাহাদুরীর সঙ্গে লড়েছেন, খুব বড় ভূমিকা পালন করেছেন এবং সর্বোচ্চ বলিদান করেছেন। ভারতীয় সৈনিকরা পৃথিবীকে দেখালেন যে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে কারোর থেকে পিছিয়ে নন। আমাদের সৈনিকরা দুর্গম অঞ্চলে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের শৌর্য দেখিয়েছেন। এসবের একটাই উদ্দেশ্য ছিল – শান্তির পুনঃস্থাপন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পুরো দুনিয়া বিনাশের তাণ্ডব দেখল। অনুমান করা হয় প্রায় এক কোটি সৈন্যবল ও ততোধিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ভয়াবহ যুদ্ধের পর পুরো বিশ্ব শান্তির মহত্ত্ব বুঝল। গত একশো বছরে শান্তির পরিভাষা বদলে গেছে। আজ শান্তি ও সৌহার্দ্যের অর্থ শুধুমাত্র যুদ্ধ না হওয়া নয় — আতঙ্কবাদ থেকে জলবায়ুর পরিবর্তন, আর্থিক বিকাশ থেকে সামাজিক ন্যায় —এই সব কিছুর জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা আর সমন্বয়ের জন্যে কাজ করাটা খুব জরুরি হয়ে গেছে। শান্তির প্রকৃত প্রতীক হলো দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের উন্নতি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপএবং এখানকার মানুষরাও অত্যন্ত প্রতিভাশালী। আমাদের উত্তর-পূর্ব এখন সেরা এবং মহৎ কাজের জন্য পরিচিত। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে জৈব চাষ খুব উন্নতি করেছে। কিছুদিন আগে sustainable food systemঅর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যব্যবস্থাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সম্মানজনক Future Policy Gold Awardএবার সিকিম জিতেছে। এই পুরস্কারটি রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা FAOঅর্থাৎ Food and Agriculture Organisation-এর তরফ থেকে দেওয়া হয়। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই বিশেষ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ নীতি প্রণয়নের জন্য যে পুরস্কারটি দেওয়া হয় সেটি অস্কার (Oscar)-এর সমান। শুধু তাই নয়, আমাদের সিকিম পঁচিশটি দেশের একান্নটি মনোনয়নকে হারিয়ে এই পুরস্কার জিতেছে। যার জন্যে আমি সিকিমের লোককে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্টোবর মাস শেষ হতে চলেছে। ঋতুর পরিবর্তন বোঝা যাচ্ছে। শীত এসে গেছে, আর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের মরশুমও চলে এলো। ধনতেরাস, দীপাবলি, ভাইফোঁটা, ছট পুজো — বলতে পারেন, নভেম্বর মাস বিভিন্ন উৎসবেরও মাস। সব উৎসবের জন্যে প্রত্যেক দেশবাসীকে আমার অনেক শুভেচ্ছা। আপনাদের কাছে আমার নিবেদন যে উৎসবের সময় নিজের খেয়াল রাখবেন, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেবেন ও সমাজের ভালোর দিকেও নজর দেবেন। উৎসবের সময় নতুন সংকল্পের সময়, নতুন অঙ্গীকারের সময়। এই উৎসব যেন আপনার জীবনে দৃঢ়সংকল্প হয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগটা এনে দেয়। আপনার প্রগতি দেশের প্রগতির একটি জরুরি অংশ। আপনারা যত এগোবেন দেশ ততটাই এগোবে। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
CG/SB |
mkb-5 | e82e1273e36c5f9933f759a4e44689d29d7b94b825fb025afffeba2f23f535e9 | ben | "আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!এক দীর্ঘ (...TRUNCATED) |
mkb-6 | c4605834b707690bb1e2cdab4400760e37b1f75dbf27f1707bf9eee45d8ee81d | ben | "আমার প্রিয় দেশবাসী! নমস্কার!\n৩-রা অক্ট(...TRUNCATED) |
mkb-7 | df5faf8283f5ce876bd01e700bc5a8756c51c2ae14c9f671cae0a733896d6108 | ben | "আমার প্রিয় দেশবাসী, অন্যান্যবার ‘মন(...TRUNCATED) |
mkb-8 | e71c51525dd8d14e4f62495aa5bc5016b56672d26b566ced87845bcbf5d1faa7 | ben | "আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!\nআজকাল অন(...TRUNCATED) |
mkb-9 | 3b7bdcf51f5404dd905b772fd855b1b1862d4b0f439ae197b110676f7ee7a77e | ben | "আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নম(...TRUNCATED) |
mkb-10 | bdd88496312b79bc33e13da88c201200c56edffc1bd7180ad0170942a0b3e98f | ben | "My dear countrymen, Namaskar. Welcome once again to Mann Ki Baat. This episode is taking place at a(...TRUNCATED) |
Pralekha: Cross-Lingual Document Alignment for Indic Languages
Pralekha is a large-scale parallel document dataset for Cross-Lingual Document Alignment (CLDA) and Machine Translation (MT) across 11 Indic languages and English. It comprises over 3 million document pairs, with 1.5 million being English-centric.
Dataset Description
Pralekha covers 12 languages—Bengali (ben
), Gujarati (guj
), Hindi (hin
), Kannada (kan
), Malayalam (mal
), Marathi (mar
), Odia (ori
), Punjabi (pan
), Tamil (tam
), Telugu (tel
), Urdu (urd
), and English (eng
). It includes a mixture of high- and medium-resource languages, covering 11 different scripts. The dataset spans two broad domains: News Bulletins (Indian Press Information Bureau (PIB)) and Podcast Scripts (Mann Ki Baat), offering both written and spoken forms of data. All the data is human-written or human-verified, ensuring high quality.
While this accounts for alignable
(parallel) documents, In real-world scenarios, multilingual corpora often include unalignable
documents. To simulate this for CLDA evaluation, we sample unalignable
documents from Sangraha Unverified, selecting 50% of Pralekha’s size to maintain a 1:2 ratio of unalignable
to alignable
documents.
For Machine Translation (MT) tasks, we first randomly sample 1,000 documents per English-Indic language pair, ensuring a good distribution of varying document lengths. After excluding these sampled documents, we use the remaining documents for training document-level machine translation models.
Data Fields
Alignable & Unalignable Set:
n_id
: Unique identifier foralignable
document pairs (Randomn_id
's are assigned for theunalignable
set.)doc_id
: Unique identifier for individual documents.lang
: Language of the document (ISO 639-3 code).text
: The textual content of the document.
Train, Dev & Test Set:
src_lang
: Source Language (eng)src_text
: Source Language Texttgt_lang
: Target Language ((ISO 639-3 code)tgt_text
: Target Language Text
Usage
You can load specific subsets and splits from this dataset using the datasets
library.
Load an entire subset
from datasets import load_dataset
dataset = load_dataset("ai4bharat/Pralekha", data_dir="<subset>")
# <subset> = alignable, unalignable, train, dev & test.
Load a specific split within a subset
from datasets import load_dataset
dataset = load_dataset("ai4bharat/Pralekha", data_dir="<subset>/<lang>")
# <subset> = alignable, unalignable ; <lang> = ben, eng, guj, hin, kan, mal, mar, ori, pan, tam, tel, urd.
from datasets import load_dataset
dataset = load_dataset("ai4bharat/Pralekha", data_dir="<subset>/eng_<lang>")
# <subset> = train, dev & test ; <lang> = ben, guj, hin, kan, mal, mar, ori, pan, tam, tel, urd.
Data Size Statistics
Split | Number of Documents | Size (bytes) |
---|---|---|
Alignable | 1,566,404 | 10,274,361,211 |
Unalignable | 783,197 | 4,466,506,637 |
Total | 2,349,601 | 14,740,867,848 |
Language-wise Statistics
Language (ISO-3 ) |
Alignable Documents | Unalignable Documents | Total Documents |
---|---|---|---|
Bengali (ben ) |
95,813 | 47,906 | 143,719 |
English (eng ) |
298,111 | 149,055 | 447,166 |
Gujarati (guj ) |
67,847 | 33,923 | 101,770 |
Hindi (hin ) |
204,809 | 102,404 | 307,213 |
Kannada (kan ) |
61,998 | 30,999 | 92,997 |
Malayalam (mal ) |
67,760 | 33,880 | 101,640 |
Marathi (mar ) |
135,301 | 67,650 | 202,951 |
Odia (ori ) |
46,167 | 23,083 | 69,250 |
Punjabi (pan ) |
108,459 | 54,229 | 162,688 |
Tamil (tam ) |
149,637 | 74,818 | 224,455 |
Telugu (tel ) |
110,077 | 55,038 | 165,115 |
Urdu (urd ) |
220,425 | 110,212 | 330,637 |
Citation
If you use Pralekha in your work, please cite us:
@article{suryanarayanan2024pralekha,
title={Pralekha: An Indic Document Alignment Evaluation Benchmark},
author={Suryanarayanan, Sanjay and Song, Haiyue and Khan, Mohammed Safi Ur Rahman and Kunchukuttan, Anoop and Khapra, Mitesh M and Dabre, Raj},
journal={arXiv preprint arXiv:2411.19096},
year={2024}
}
License
This dataset is released under the CC BY 4.0 license.
Contact
For any questions or feedback, please contact:
- Raj Dabre ([email protected])
- Sanjay Suryanarayanan ([email protected])
- Haiyue Song ([email protected])
- Mohammed Safi Ur Rahman Khan ([email protected])
Please get in touch with us for any copyright concerns.
- Downloads last month
- 444